ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

রিকশা ও ভ্যানে করে রাজবাড়ীর হাটে পাট এনেছেন কৃষক। সম্প্রতি তোলা ছবি সমকাল

রাজবাড়ী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ২৩:৫৩

রাজবাড়ীতে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক। খরা, অনাবৃষ্টিতে পাট উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত খালবিল না থাকা এবং পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, চলতি বছর রাজবাড়ী জেলায় খুব একটা বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যেসব খালবিল পানিতে টইটম্বুর থাকে, সেসব এখনও পানিশূন্য। পাট রোপণের পর অনেক ক্ষেতে কৃত্রিম উপায়ে সেচ দিতে হয়েছে। পাট পরিণত হওয়ার পর জাগ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা পাননি কৃষকরা। ক্ষেত থেকে অনেক দূরে নছিমন, করিমন, ভ্যানে করে পাট নিতে হয়েছে খালবিলে। সেসব জায়গায় অত্যধিক পাট একসঙ্গে জাগ দেওয়ায় রং হয়ে গেছে কালো। কোথাও আবার স্বল্প পানিতে দিতে হয়েছে পাট জাগ। এখন চলছে পাট বিক্রির সময়। রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন হাটে কৃষকরা পাট বিক্রি করতে যাচ্ছেন। কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে বিরস মুখে বাড়ি ফিরছেন তারা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার কামালপুর গ্রামের কৃষক লালন মণ্ডল জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। দুই বিঘা জমিতে শুধু শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। একেকজন শ্রমিককে দুপুরের খাবারসহ ৮০০ টাকা করে দিতে হয়। তাও সবসময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। এরপর পাট জাগ দেওয়ার সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। জমি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে পরিবহন খরচ হয়েছে অনেক। এই দুই বিঘা জমিতে পাট হয়েছে ৯ মণ। বৃহস্পতিবার রাজবাড়ীর হাটে আড়াই হাজার টাকা মণ দরে পাঁচ মণ পাট বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচও ওঠেনি। যে আশা নিয়ে তিনি পাট চাষ করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। বরং নিজের শ্রম, ঘাম সব বিফলে গেছে। গত বছর আট বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। সেবার খুব একটা লাভ হয়নি বলে কমিয়ে দেন এবার। আগামীবার আরও কমাবেন পাট চাষ। অন্য ফসল চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের কৃষক শামীম শেখও জানালেন এমন কথা। বলেন, পাট চাষ করে কোনো লাভ নেই। পরিশ্রমই বৃথা। তাঁর এক বিঘা জমিতে পাট হয়েছে পাঁচ মণ। খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকার মতো। বিক্রি করে পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে তারা পরিবারের তিনজন যে শ্রম দিয়েছেন তার হিসাব নেই। পাট চাষের জন্য যেভাবে তারা পরিশ্রম করেন তার দাম ওঠে না।
রাজবাড়ী বাজারের পাট ব্যবসায়ী গদাধর রায় জানান, এ বছর মণপ্রতি ২২শ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পাট কেনাবেচা হচ্ছে। ভালো পাট তিন হাজার টাকা মণ। আর একটু খারাপ পাট ২২শ থেকে ২৫শ টাকা মণ। গতবারের চেয়ে এবার পাটের আমদানি কম। দাম গতবারের থেকে বেশি। তারা পাট কিনে রাখছেন। মিল খুললে সেখানে পাঠাবেন বলে জানান।
রাজবাড়ী পাট বাজারের পিয়াল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফরিদুজ্জামান জানান, ভালো মানের পাট তারা ৩ হাজার টাকা মণে কিনছেন।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি রাজবাড়ী জেলার মাঠ পর্যায়ে গিয়ে পাটের উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রথম দিকে খরার কারণে পাটের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে পাটের ফলন কম হয়েছে। বালিয়াকান্দি, পাংশা, কালুখালীতে পাট ভালো হয়েছে। গড় ফলন কাঙ্ক্ষিত ফলনের কাছাকাছি। পাট জাগ দেওয়াও সমস্যা ছিল। কালো পানিতে পাট জাগ দেওয়ার কারণে পাট কালো হয়ে গেছে। ওই পাট বাজারে একটু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ভালো পাট ২৮শ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ২৫শ থেকে ২৮শ টাকা মণ বিক্রি করলে কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ বছর পাট উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে কম হয়েছে। কারণ কিছু কৃষক আগ্রহ হারিয়েছেন। ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের পরিবর্তে আউশ চাষ করেছেন কৃষক। বৃষ্টি পর্যাপ্ত না হওয়ায় জাগ দেওয়ার জায়গা না পেয়ে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে তিনি মনে করেন। আগামী বছর যাতে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হন, এ জন্য তারা সচেষ্ট হবেন বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। মোট উৎপাদন হওয়ার কথা ১ লাখ ১ হাজার ৫৪৭ টন।

আরও পড়ুন

×