বড়ঘাট দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
মেয়েকে এমপিওভুক্তি, জাল সনদে নিয়োগ

ফাইল ছবি
রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:৫৩
জালিয়াতি করে মেয়েকে অফিস সহকারী পদে এমপিওভুক্তি করেছেন রাজারহাট উপজেলার বড়ঘাট দাখিল মাদ্রাসার সুপার। একই পদে একাধিক শিক্ষকের এমপিওভুক্তি ও জাল সনদে শিক্ষকতার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অনিয়ম করতেই স্বজনদের নিয়ে মনগড়া কমিটি করে খেয়ালখুশিমতো মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রাথমিক তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অভিযোগে জানা গেছে, ২০০০ সালের মে মাসে মাহফুজার রহমান অফিস সহকারী পদে যোগদান করে এমপিওভুক্ত হন। ২০১৫ সালে জানুয়ারি মাস থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া এমপিও সিটে তাঁর পদবির স্থানটি ফাঁকা দেখানো হয়। দীর্ঘদিন এভাবেই রাখা হয়। ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসে তাঁর পদে রহস্যজনকভাবে মাদ্রাসা সুপার আব্দুল আউয়ালের মেয়ে আক্তারুন্নাহারের নাম এমপিও সিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই বছর জুলাই মাস থেকে মাহফুজার রহমানের নাম ইবতেদায়ি শাখার জুনিয়র মৌলভী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়। এ পদে আগে থেকেই মৌলভী শিক্ষক জাহানারা বেগম কর্মরত আছেন।
শিক্ষক ও কমিটির সাবেক সদস্য জানান, অফিস সহকারী পদে মাহফুজার রহমান কর্মরত আছেন। ওই পদ শূন্যও হয়নি কিংবা সুপারের মেয়ে আক্তারুন্নাহারকেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরপরও তাঁর নাম কীভাবে এমপিওভুক্ত হলো বিস্মিত তারা।
একইভাবে বিস্ময় প্রকাশ করেন মাহফুজার রহমান। তিনি বলেন, সুপার আব্দুল আউয়াল জালিয়াতির মাধ্যমে আমার পদে তাঁর মেয়েকে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করেছেন। আমাকে ইবতেদায়ি জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে চালানোর চেষ্টা করছেন। জেনারেল সার্টিফিকেট দিয়ে কীভাবে ইবতেদায়ি শিক্ষক হলাম? –এ জবাব কে দেবে?
এখানে থেমে নেই সুপার আব্দুল আউয়ালের দুর্নীতি। তিনি অর্থের বিনিময়ে জাল এনটিআরসিএর সার্টিফিকেটে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ফিরোজা বেগমকে চাকরি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এভাবে খেয়ালখুশিমতো মাদ্রাসা পরিচালনা করতেই সুপার তাঁর তিন ভাই সিদ্দিকুর রহমান, আবুবক্কর, ছোলায়মান, চাচাতো ভাই আব্দুল জলিল, ভগ্নিপতি আবুল হোসেন ও ভাবি কহিনুর বেগমকে দিয়ে গোপনে মনগড়া পরিচালনা কমিটি করেছেন। এসব অভিযোগ নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। সম্প্রতি মাদ্রাসার অফিস কক্ষে এসব অভিযোগের তদন্ত করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক মনকিউল হাসনাত।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সুপার আব্দুল আউয়াল বলেন, অফিস সহকারির পদ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে মামলা চলছে। নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। জাল সার্টিফিকেটে চাকরি দেওয়া ও স্বজনদের নিয়ে কমিটি করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। কথা বলতে চাননি জাল সার্টিফিকেটে চাকরি করার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ফিরোজা বেগমও।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক মনকিউল হাসনাত বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দাখিলের পর কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।