ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে...

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে...

একসময় তারা দৌলতদিয়া ঘাটে ভিক্ষা করতেন। এখন গর্বিত কর্মী সমকাল

আজু শিকদার, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৭

কেউ হাঁটতে-চলতে পারে না, কেউ ঠিকমতো কথা বলতে পারে না, কারও শরীরের কোনো একটি অঙ্গ নেই। এক সময় তারা সবাই দৌলতদিয়া ঘাটে ভিক্ষা করতে। কিন্তু সেই কাজ ছেড়ে তারা এখন গর্বিত কর্মী। নিজেদের প্রচেষ্টায় তৈরি করছেন ফুলের ঝাড়ু। প্রতিবন্ধীদের তৈরি এসব ফুলের ঝাড়ু বিক্রি হচ্ছে রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলায়। এতে করে তারা এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী।
জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে এক সময় ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করত শতাধিক প্রতিবন্ধী। তারাসহ গোয়ালন্দ উপজেলার ৪৭৪ জন প্রতিবন্ধীকে নিয়ে গঠন করা হয় গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা। এসব প্রতিবন্ধী ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে গর্বিত কর্মী হওয়ার প্রচেষ্টায় তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। প্রতিবন্ধীরা নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি করছেন ফুলের ঝাড়ু। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝাড়ু তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এখন অল্প কয়েকজন এ কাজে সম্পৃক্ত থাকলেও আগামীতে সব প্রতিবন্ধী সদস্যকে ভিক্ষুকের জীবন থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের এই অসহায় মানুষগুলো। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সড়কে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়কেই তারা ফুলের ঝাড়ুর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করছেন।
শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষগুলো জানান, ভিক্ষা করেই জীবন চলত তাদের। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকেই ঘাটের যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে যায়। আর তখনই চরম বিপাকে পড়েছিলেন এখানকার প্রতিবন্ধীরা। সংসারে নেমে এসেছিল হতাশার ছায়া। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দিন পার করাই কষ্টকর হয়ে উঠেছিল। কারণ দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রী কম থাকায় ভিক্ষার পরিমাণ একেবারেই কমে এসেছিল। এ কারণে তারা বিকল্প কর্মের চিন্তা শুরু করে। এ অবস্থায় প্রতিবন্ধীদের সংগঠন তাদের কিছু সদস্যদের নিয়ে ফুলের ঝাড়ু তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ ফুলের ঝাড়ু তৈরি করেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তারা। 
প্রতিবন্ধী হালিম শেখ জানান, এক সময় তারা ভিক্ষা করতেন। এখন তারা ভিক্ষা ছেড়ে ফুলের ঝাড়ু তৈরি করছেন। এখন অনেক ভালো আছেন। ফুলের ঝাড়ু তৈরি করতে তারা যে যেমন কাজ পারেন, তেমনিভাবে করার চেষ্টা করেন। তাদের এ উদ্যোগকে সফল করতে সমাজের সবার সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার প্রতিবন্ধীরা এক সময় অন্যের হাতের টাকার দিকে তাকিয়ে থাকত। ঘাটের বিভিন্ন জায়গায় তারা ভিক্ষা করে চলত। কিন্তু এখন কাজ করে খাচ্ছে। এটা অনেক খুশির বিষয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোন্নাব শেখ জানান, ফুলের ঝাড়ু তৈরির কাঁচামাল বান্দারবান অথবা খাগড়াছড়ি থেকে আনতে হয়। প্রতিবন্ধীরাই সেখানে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচামালগুলো এনে থাকেন। প্রতিবন্ধী ছাড়া এখানে কোনো স্বাভাবিক মানুষ কাজ করেন না।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রতন শেখ জানান, প্রতিবন্ধী সংস্থার সদস্যরা অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন বাজারে ফুলের ঝাড়ুগুলো বিক্রি করে থাকেন। এই প্রতিবন্ধীদের কথা বিবেচনা করে সবাইকে তাদের তৈরি ফুলের ঝাড়ু ক্রয় করার অনুরোধ করেন তিনি। এ ছাড়া তাদের বিক্রি করা ফুলের ঝাড়ুর জন্য বাজারের খাজনা মওকুফের দাবি জানান তিনি। 
গোয়ালন্দের ইউএনও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, প্রতিবন্ধীদের এই প্রচেষ্টাকে তারা সাধুবাদ জানান। উপজেলা প্রশাসন থেকেও তাদের সহযোগিতা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ১ লাখ টাকা অনুদান ও ২ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিবন্ধীদের পাশে আছেন।

আরও পড়ুন

×