ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা আত্মসাৎ ইউপি সদস্যের 

বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা আত্মসাৎ ইউপি সদস্যের 

ফাইল ছবি

পিরোজপুর ও ভাণ্ডারিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৯:১৪

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ উন্নয়ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেন মুন্সীর বিরুদ্ধে। সহায়তা বা টাকা না পেয়ে বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। 

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেন মুন্সী ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ৫ নম্বর ধাওয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে উপজেলা মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা। 

তাঁর অনিয়মের বিষয়ে ভুক্তভোগী পশারিবুনীয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পিরোজপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া পিরোজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ভাণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।  

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেন মুন্সী ১৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় শত শত অসহায়-দরিদ্র মানুষকে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা, সরকারি ঘর, টিউবওয়েলসহ সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একেকজনের কাছ থেকে ২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া মসজিদ সংস্কার, ঘাটলা নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
ভয়ে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায় না। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফিরোজ মুন্সী দীর্ঘ সময় ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নানা অনিয়ম করে দরিদ্রদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। গড়ে তুলেছেন সুরম্য অট্টালিকা। তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলেই মনে হয়, এটা কোনো এমপি বা মন্ত্রীর বাসা। সেখানে এরশাদ শিকদারের বাড়ির মতো সুড়ঙ্গ আছে বলেও অনেকে জানিয়েছেন। 

ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. ফোরকান খান বলেন, বাবার মৃত্যুর পর মাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে ১ হাজার ৫০০ টাকা নেন ফিরোজ মুন্সী। ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘোরাচ্ছেন। কার্ড দূরের কথা, টাকা চাইতে গেলেই উল্টো মারধরের হুমকি দেন। 

আরেক ভুক্তভোগী ছগির খান বলেন, ঘর দেওয়ার কথা বলে ৩০ হাজার টাকা চান ইউপি সদস্য। সুদে ধার করে ১৮ হাজার টাকা দিয়েছি। ৬ বছর ধরে আমাকে ঘোরাচ্ছেন। টাকা চাইলে নানাভাবে হয়রানি ও হুমকি দেন। এখন আমি সুদের টাকা দিয়ে যাচ্ছি; কিন্তু মূল টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। আমি তার বিচার চাই।

এ বিষয়ে কথা বলতে ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেন মুন্সীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গা-ঢাকা দেওয়ায় তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। তাই বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

অভিযোগের বিষয়ে দুদকের জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ গোলাম মাওলা বলেন, ইউপি সদস্য ফিরোজ মুন্সীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। অবৈধ আয়ে বাড়ি নির্মাণ করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে। 
 

আরও পড়ুন

×