ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মঠবাড়িয়া উপজেলা

দুই বলয়ে বিভক্ত বিএনপি

চলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা

দুই বলয়ে বিভক্ত বিএনপি

ফাইল ছবি

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৯:২৪

চারটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপি। প্রায়ই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ নানা অভিযোগ করছেন তারা। এ নিয়ে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি। নিজেদের কোন্দলের নিরসন না করে দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন, যা নিয়ে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিভক্তি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ না করলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, প্রাণহানিসহ করুণ পরিণতির আশঙ্কা তৃণমূলের। 

দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপির এক গ্রুপের নেতৃত্বে দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির (বহিষ্কৃত) আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলাল ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমাউন কবির। অপর গ্রুপে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আবু বক্কর ছিদ্দিক বাদল ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নাজমুল আহসান কামাল মুন্সী। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামিম মৃধা ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহআন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এ আর মামুন খানের সমর্থকরাও আলাদাভাবে মাঠে কাজ করছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর চারটি পক্ষ পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করে। 

গত ৪ আগস্ট উপজেলা বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন তাঁর নিউমার্কেট কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে বলেন, পরিষদসংলগ্ন ১৪ শতাংশ পৈতৃক সম্পত্তি ভাণ্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম দখল করে বহুতল ভবনের কাজ শুরু করেন। বাধা দিলেও কাজ হয়নি। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে। ৩ সেপ্টেম্বর আবার শ্রমিকরা কাজ শুরু করলে কাজ বন্ধ করে দিই। খবর পেয়ে রুহুল আমীন দুলালের অনুসারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম ও  পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি খায়রুল আলম পিন্টুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন ঘটনাস্থলে গিয়ে আবার কাজ শুরু করে। বাধা দিলে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা হয়। 

ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রুহুল আমীন দুলালের ইন্ধনে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। চক্রটি শহরের সবক’টি বাস কাউন্টার দখল করে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।

এদিকে ইসলামই হোসেনের এ অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম শহরের রুটিপট্টি দলীয় কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি ইসমাইল হোসেনকে দলের অনুপ্রবেশকারী বলে আখ্যা দেন। তাঁর ভাষ্য, ঘটনার দিন ইসমাইল ও তাঁর সহযোগী সাবেক পৌর কাউন্সিলর ছগির দফাদার উপজেলা পরিষদসংলগ্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে বহুতল ভবনের নির্মানকাজে বাধা দেয়। তারা রাজমিস্ত্রির কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চাঁদাবাজি না করতে নিষেধ করি। 

রিয়াজুল ইসলামের অভিযোগ, ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদসংলগ্ন আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলালের বাসভবনে যুবদলের কর্মিসভা চলাকালে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের নেতৃত্বে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলাল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কেএম হুমাউন কবীর, যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম ফরাজীসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। ওই হামলায়ও আবু বক্কর ছিদ্দিক বাদল ও নাজমুল আহসান কামাল মুন্সীর হাত ছিল। 

তবে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল আহসান কামাল মুন্সী এ অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, ওই সময় তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইসমাইলের অভিযোগ, পরদিন গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে মঠবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমীন আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করা বিএনপির একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। নামে-বেনামে দলের উচ্চ মহলে অভিযোগ করছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখলের মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সংবাদ প্রকাশের আগে কেউ যোগাযোগও করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমাউন কবির, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সালাউদ্দিন ফারুক, জসিম উদ্দিন ফরাজী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজামুল কবির মিরাজ, ছাত্রদল নেতা রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ। 

দলে বিভক্তির কথা স্বীকার করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলালকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন বিভেদ করার সময় নয়। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা-উপজেলায় কোন্দল মিটাতে সাংগঠনিক টিম কাজ করছে। নেতাকর্মীর কোন্দল মিটিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর পরেও কোনো নেতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

আরও পড়ুন

×