ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর উদযাপন ঘিরে প্রতিপক্ষের হামলা, নিহত ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর উদযাপন ঘিরে প্রতিপক্ষের হামলা, নিহত ১

নিহত মীর মোহাম্মদ মিলন। ছবি-সংগৃহীত

কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২১:৩৩

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বের করা জশনে জুলুশের মিছিলকারী ও ঈমাম উলামাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মীর মোহাম্মদ মিলন (৫৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন।

সোমবার উপজেলার ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মীর মোহাম্মদ মিলন ছয়সুতী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সদস্য এবং স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির ৩নং ওয়ার্ড কমিটির সহ সভাপতি। 

তাঁর ভাতিজা মীর মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর মিলন মারা যান। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।

মসজিদে হামলা ও হত্যার ঘটনায় উপজেলা ঈমাম উলামা পরিষদ মঙ্গলবার প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘লংমার্চ টু ছয়সুতী’ ঘোষণা করেছে। সোমবার দুপুরে ছয়সুতী বাসস্ট্যান্ড কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের এ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। এ পরিস্থিতিতে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জানা যায়, প্রতি বছর এইদিনে স্থানীয় ঈমাম উলামা পরিষদ সীরাতুন্নবী (স.) এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) পালন করে। এ উপলক্ষে ছয়সুতী প্রতাপনাথ বাজারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা গত রোববার মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। এ আয়োজনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল দেশের আলোচিত বক্তা গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর। অপর দিকে আজ সোমবার সকালে ছয়সুতী বাসস্ট্যান্ডে ঈমাম উলামা পরিষদের সীরাতুন্নবী (স.) কর্মসূচি ছিল। উভয় দলের কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গিয়াস উদ্দিন তাহেরীর মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হয়। অপরদিকে উলামাদের কর্মসূচিও পরিবর্তন করা হয়। 

তবে ছয়সুতী গাউছিয়া দরবার শরীফের পীর মরহুম শাহ সুফী সৈয়দ মঞ্জুরুল হামিদের বড় ছেলে সৈয়দ ফয়জুল আল আমিন বলেন, মাহফিল বন্ধ করা হলেও প্রশাসনের রোড ম্যাপ অনুযায়ী জশনে জুলুশের মিছিল করার অনুমতি ছিল। কিন্তু আমাদের মিছিলের কিছু লোক রোডম্যাপের বাইরে চলে গিয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী উলামা পরিষদ নেতা মাওলানা তানভীর আহমেদ বলেন, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিলকারীরা মসজিদে হামলা করলে মসজিদ কমিটির সদস্য মীর মোহাম্মদ মিলন বাধা দেন। তখন হামলাকারীরা তাঁর মাথায় আঘাত করে।

তিনি বলেন, হামলার সময় মসজিদ সংলগ্ন খাদেমুল ইসলাম হোসাইনিয়া মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে মসজিদের মাইকে স্থানীয়দের কাছে সহায়তা চায়। এক পর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পিছু হটে। পরে উলামাদের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে ছয়সুতী গাউছিয়া দরবার শরীফ ও বাড়িঘরে হামলা চালায়। 

ছয়সুতী গ্রামের গৃহবধূ রিপা আক্তার বলেন, হুজুরদের লোকজন তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এছাড়া হামলাকারীরা অন্তত ১০-১২টি বাড়ি এবং দোকানপাটে হামলা করেছে বলে জানান স্থানীয়রা। 

সংঘর্ষ ও হামলায় রেদোয়ান (১৮), আনোয়ারা (৮০), রূপবানু (৪০), বাবু মিয়া (১০), শফিকুল (১২), সেলিম মিয়া (৩২), হাফিজুল ইসলাম (২০), আল আমিন (১৯), মিল্লাত মিয়া (২৫) সহ ২০-২৫ জন আহত হয়েছে। 

বাজিতপুর আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর নূর ইমতিয়াজ বলেন, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা চাওয়া হলে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। 

তবে এ বিষয়ে জানতে কুলিয়ারচর থানার ওসি এবং ইউএনও’র মোবাইলে বার বার ফোন করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। 

আরও পড়ুন

×