প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় চলত ডনগিরি
জমি দখল থেকে মাটি বিক্রি সব ছিল ডনের নিয়ন্ত্রণে

ডালিম আহমেদ ডন
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:৪২
সিংড়া পৌর শহরে ২২ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করেছেন। পাশেই বিশাল গোডাউন। স্ত্রীর নামেও রয়েছে অঢেল সম্পদ। অবৈধভাবে এসব জমি দখল করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায়। এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ সব কর্মকাণ্ড চালাতেন মন্ত্রীর আশকারায়। তাঁর কাছে জিম্মি এলাকার সাধারণ মানুষ। এসব অভিযোগ উঠেছে সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ডালিম আহমেদ ডনের বিরুদ্ধে।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর গা-ঢাকা দিয়েছেন ডন। এ সুযোগে এলাকার মানুষ তাঁর সম্পর্কে মুখ খুলতে শুরু করেছে। প্রকাশ হচ্ছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। গত ২৫ আগস্ট মামলাও করেছেন কাজীনুর জরিন জাহান নামে এক ভুক্তভোগী শিক্ষক। অন্যরাও আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
ডনের প্রতিবেশী গরুহাট মহল্লার সাখাওয়াত হোসেন শাখা বলেন, দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই ডন এবং তাঁর পরিবারের। ২০০৮ সালের আগে একটি টিনের ঘর ছাড়া আর কোনো সম্পদ ছিল না তাদের। বর্তমানে দৃশ্যমান সম্পতির পরিমাণই ১৬ কোটি টাকা। বেনামে আরও কত সম্পদ রয়েছে, তা জানা নেই।
সিংড়া ফেরিঘাট-সংলগ্ন গরু-মহিষের হাটসহ এলাকাজুড়ে ছিল ডালিম আহমেদ ডনের রাজত্ব। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ফাইভ স্টার বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন ডন। ২০২২ সালে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন। এর পর থেকেই শুরু হয় ডনের ডনগিরি। পৌর শহরের গরুহাট এলাকায় অধিকাংশ জায়গা হাটের দোহাই দিয়ে দখল করে রেখেছেন। অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেনের ৪০ শতাংশ জায়গা রাতারাতি দখল করে গড়ে তুলেছেন বিশাল গোডাউন। এ জমির মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। পাটকোল এলাকার লেমন মাস্টারের ১৫ বিঘা ও আইয়ুব মণ্ডলের আউকুড়ি মহল্লায় থাকা ৭ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন, যার মূল্য ১৪ কোটি টাকা। শিক্ষক জেসমিন সরকারের চলনবিল মহিলা কলেজের পাশে ৬ শতাংশ জায়গাও তাঁর দখলে। এ ছাড়াও নামে-বেনামে রয়েছে তাঁর অঢেল সম্পদ। দখলের রাজত্ব কায়েম করলেও তাঁর বিরুদ্ধে এতদিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। অভিযোগ করলেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, হাতিয়ান্দহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন জীবিত থাকা অবস্থায় অগ্রণী ব্যাংকে জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেন। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে তিনি মারা যান। শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী কাজীনুর জরিন জাহান। ডন বাসায় আসেন সান্ত্বনা দিতে। মা বলে ডেকে কৌশলে বাসায় নিয়ে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। এ কথা কাউকে বললে তিন সন্তানসহ মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। কয়েক দিন পর জরিন জানতে পারেন, তাদের জায়গা দখল করে গোডাউন করছেন ডন। বাধা দিতে গেলে হত্যার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।
কাজীনুর জরিন বলেন, জমির কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে ঋণ নিয়েছি। এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। সেই জমি খাস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ডন। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর কাছে বিচার দিতে চেয়েছিলাম। এতিম সন্তানদের মেরে ফেলতে পারে– এ ভয়ে আর যাইনি। এখন সরকার পরিবর্তন হয়েছে। ২ কোটি টাকার সম্পত্তি ফিরে পেতে মামলা করেছি। এখন প্রশাসনের সহায়তা ও ডনের বিচার চাই।
বাসায় ডেকে নিয়ে দলিলে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডালিম আহমেদ ডনের স্ত্রী আইরিন রানী। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়েও তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অগ্রণী ব্যাংক সিংড়া শাখার ম্যানেজার কামরুল হাসান জানান, ব্যাংকে সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছিলেন অধ্যক্ষ মৃত ইসমাইল হোসেন। এই সম্পদ ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ। এটা কেউ বেচাকেনা করতে পারবে না।
সিংড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আকবর আলী বলেন, সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতির জায়গা দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- অবৈধ সম্পদ অর্জন
- আওয়ামী লীগ নেতা
- নাটোর
- সিংড়া