চিকিৎসাসেবা বেহাল রোগী যাচ্ছে অন্যত্র

বগুড়ার মোকামতলা ভাগকোলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জরাজীর্ণ ভবন ও সীমানাপ্রাচীর সমকাল
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২২:৫১
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলায় ভাগকোলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এক সময় এটি রোগী ও চিকিৎসকের উপস্থিতিতে সবসময় জমজমাট থাকত। এখন ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে ধীরে ধীরে কমছে রোগী, তাদের যেতে হচ্ছে শহরের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে। কেন্দ্রের ভবনগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এতে এলাকার লক্ষাধিক মানুষ কম খরচে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলার আরও অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবার এমন বেহাল।
বগুড়ার সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলায় ৫০টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২১টিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া আছে। ১২টি কেন্দ্র সচল রয়েছে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায়। বাকি ১৭টিতে কোনো মতে চলে চিকিৎসাসেবা।
১৯৭৫ সালে ৬৬ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ভাগকোলা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় তিনটি আবাসিক ও একটি প্রশাসনিক ভবন। প্রতিষ্ঠার পর সেখানে চিকিৎসা কর্মকর্তারা (মেডিকেল অফিসার) সেবা দিতেন। ছিল অপারেশন থিয়েটারও। তবে এ চারটি ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। একটি ভবনে স্বল্প পরিসরে চলে চিকিৎসা।
এক সময় এলাকার মানুষ চিকিৎসা নিতে ভিড় জমাতেন জানিয়ে স্থানীয় কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আগে বড় চিকিৎসকরা বসতেন। এখন আর নেই। শুধু জ্বর-সর্দি আর মেয়েদের কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। তাও আবার সাত দিন পরপর।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ ছিল বলে মনে করেন নার্গিস আক্তার নামে ভাগকোল গ্রামের এক শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘লক্ষাধিক মানুষ এখান থেকে চিকিৎসাসেবা পেতেন। তবে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এলাকার লোকজন ভবনগুলোর জানালা, দরজা ও
প্রাচীরের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। ভবনগুলোর
মাঝে গরু-ছাগল পালন করেন।’ তিনি দ্রুত কেন্দ্রটির সংস্কার করে আগের মতো চিকিৎসা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসক পদায়ন থাকার কথা থাকলেও একজন ফার্মাসিস্ট ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম। এতে রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর হোসেনের ভাষ্য, উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালুর প্রথম দিকে আউটডোরের পাশাপাশি ইনডোর চিকিৎসাসেবা চালু ছিল। এখন শুধু আউটডোর সেবা চালু আছে। সপ্তাহে শুধু বুধবার কেন্দ্রটিতে সেবা দিতে আসেন দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী। এটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হলে হাজারো মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে অফিস সহায়কের দায়িত্ব পালন করেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর মূল কর্মস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু ভাগকোলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রটিতে প্রতি সপ্তাহের সোমবার যান ফার্মাসিস্ট মাহামুদ হাসান। তিনি বলেন, তাঁর কর্মস্থলও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনিও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
ভাগকোলা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর মেডিকেল অফিসার চিকিৎসাসেবা দিতেন নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এক সময় নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি সংস্থা কেন্দ্রটি পরিচালনা করা শুরু করে। তাদের প্রকল্প শেষ হওয়ার পর প্রায় এক যুগ হলে সেখানে স্বাস্থ্যসেবা ঠিকভাবে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ সরকারিভাবে জনবল ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বরাদ্দ নেই। কোনো চিকিৎসককেও পদায়ন করা হয়নি।
সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, শিবগঞ্জের স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির স্থাপনাগুলো সংস্কার ও পরিবর্তনে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক থাকলেও তারা উপজেলায় সংযুক্ত আছেন। জনবল সংকট কাটাতে চেষ্টা চলছে। জনবল পাওয়া গেলে আগের মতো সচল হবে।
- বিষয় :
- ভবন ধস