ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঝালকাঠির দুই আশ্রয়ণ প্রকল্প

চাল নেই বেড়া নেই চলে যাচ্ছে মানুষ

চাল নেই বেড়া নেই চলে যাচ্ছে মানুষ

বসবাসের অনুপযোগী কিস্তাকাঠি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:১৩ | আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:১৩

কোনোটির চালা নেই। কোনোটিতে বেড়া নেই। কোনোটিতে আবার মরিচা ধরে হাজারো ফুটো। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে চালার নিচে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। বেশির ভাগ ঘরের দরজা ও জানালা ভাঙাচোরা। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। এ চিত্র ঝালকাঠির আটটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের। 

বাসিন্দাদের দাবি, একাধিকবার ঘর সংস্কারের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন জানালেও সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে বরাদ্দ এলেই মেরামত করা হবে– বলছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 
সরেজমিন দেখা যায়, সুগন্ধা, বিষখালী ও গাবখান– তিন নদীর মোহনায় অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে নেই কোনো সাইক্লোন শেল্টার। ২০০৬ সালে ৬০ পরিবার, ২০০৭ সালে ৪৫০টি পরিবার এখানে থাকার সুযোগ পায়। অধিকাংশ ঘরের টিন নষ্ট হয়ে গেছে। ২৫টি টিউবওয়েলের মধ্যে সচল আটটি। বাকিগুলো অকেজো দুই বছর ধরে। টিনের চালা নষ্ট। পলিথিন দিয়ে বৃষ্টির পানি ও রোদ থেকে বাঁচার চেষ্টা চলছে বছরের পর বছর। রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। ১৮০টি টয়লেটের সবক’টি ব্যবহারের অযোগ্য। পুরোনো টয়লেট জোড়াতালি দিয়ে ব্যবহার হচ্ছে। ময়লা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তিনটি কমিউনিটি সেন্টার পরিত্যক্ত। কবরস্থান নেই। বাসিন্দাদের কেউ মারা গেলে দুর্ভোগের শেষ নেই। নদী পার হয়ে বা সড়কপথে ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শহরের কবরস্থানে যেতে হয়। বেশির ভাগ মানুষের যাতায়াত খেয়া নৌকায়। নালা নেই। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় উঠানে জলাবদ্ধতা। 

আশ্রয়ণের বাসিন্দা রিকশাচালক বারেক ও আনিচ হাওলাদার বলেন, ১৬ বছর ধরে এখানে আছি। একবারও ঘর ও টয়লেট সংস্কার হয়নি। দিন আনি দিন খাই। টাকার অভাবে সংস্কার করতে পারছি না। পলিথিন দিয়ে রোদ ও পানি কোনোমতে সামাল দিচ্ছি। 

আরেক বাসিন্দা মমতাজ বেগম (৭০) বলেন, স্বামী-সন্তান নেই। সবজি বিক্রি করে কষ্ট করে খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে হয়। ঘরের চাল কী দিয়ে ঠিক করব। 
সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। ইতোমধ্যে চলে গেছে অনেক বাসিন্দা। যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। তাদের মধ্যে দিনমজুর মো. সোলায়মান আশ্রয়ণ ছেড়ে গাবখান ফেরিঘাট এলাকায়, নান্না মিয়া অতুল মাঝি খেয়াঘাট, দিনমজুর মোনায়েম বন্দাঘাট, মো. রুস্তম কলেজ খেয়াঘাট, দিনমজুর খোদেজা বেগম শ্মশানঘাট, দিনমজুর মরিয়ম বেগম পালবাড়ী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন।   

কিস্তাকাঠি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক মো. মন্টু খলিফা জানান, তিন নদীর মুখে আমাদের বসবাস। ঝড় ও বন্যায় নিরাপদ স্থানে যেতে পারি না। ১৪০ পরিবারের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। সমস্যার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও সুফল পাচ্ছি না।  

শুরেস মিস্ত্রি, শংকর মালাকার, অমূল্য বেপারিসহ কয়েকজন জানান, তাদের জন্য দুটি টিউবওয়েল থাকলেও অকেজো। চলাচলের একমাত্র সাঁকোটি নড়বড়ে। পূজার জন্য দুর্গা মন্দিরের দাবি জানিয়েছি বহুবার। পূরণ হয়নি। 

চরভাটারকান্দা আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। ২৬০ পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও দুর্ভোগের শেষ নেই এখানেও। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় এখান থেকে আরব আলী ঝালকাঠির কাঠপট্টি এলাকায় চলে গেছেন। জেলে ইউনুস খান শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। দোকানদার সোহাগ মোল্লার ঠাঁই হয়েছে চাচার বাড়িতে। এভাবে শ্রমিক কবির ও হালিম হাওলাদারের মতো অনেকেই শহরের সদর হাসপাতালের পেছনে আশ্রয় নিয়েছেন।

এ প্রকল্পের সভাপতি মো. নয়ন খান ও সাধারণ সম্পাদক আরব আলী জানান, সরকার বসতি স্থাপন করে দিলেও দীর্ঘদিন সংস্কারের ব্যবস্থা করেনি। সব ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই চলে গেছে। 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মণ্ডল জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।  


 

আরও পড়ুন

×