আ’লীগের কাছ থেকে ‘বিনা টাকায় সাব-লিজ’ বিএনপির

.
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৩৩
ভারতীয় চোরাই গরুর বিক্রির জন্য পরিচিত সুনামগঞ্জ সীমান্ত এলাকার অনেক হাট ‘সাব-লিজ’ পেয়েছেন বিএনপি ও যুবদলের কিছু নেতা। আগের ইজারদাররা লাখ লাখ টাকা খরচ করে ইজারা নিলেও বিএনপি নেতারা বিনা পয়সায় তাদের কাছ থেকে সাব-লিজ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সুবিধাভোগীরাও কোথাও কোথাও আছেন তাদের সঙ্গে।
জেলার মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকার কাছাকাছি হাট ভোলাগঞ্জ ও মহিষখলায় ভারতীয় গরু বিক্রি হয়। এ দুই হাটে নানা কৌশলে বিক্রির পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৈধ কাগজ দেখিয়ে সেগুলো সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেছেন, কয়েক বছর ধরে অনেকটা উন্মুক্ত এই সীমান্ত। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিম মাহমুদ গরু চোরাচালানে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাঁর চাচা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন) হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনও তাঁকে সহযোগিতা করেছেন। ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত মহিষখলা বাজারের গরুর হাট নিয়ন্ত্রণ করতেন ডিআইজি পরিবারের লোকজনই। এই বাজারের কাছাকাছি এলাকায়ও অনুমোদন ছাড়াই আরেকটি বাজার দাতিয়াপাড়া গরুর হাট সৃষ্টি করেছিলেন তারা। এটিও চোরাই গরুর হাট হিসেবে পরিচিত। আজিম মাহমুদের নিয়ন্ত্রণেই চলছিল এই হাট। দাতিয়াপাড়া বাজার থেকে চোরাই গরু বৈধ করার হাসিলও দেওয়া হতো।
এই সীমান্তের আরেক অবৈধ গরুর বাজার ভোলাগঞ্জ। এই বাজারে গবাদি পশুর হাট না থাকলেও সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে এ বাজার হয়েই চোরাই পথে আসা গরু ও মহিষ সীমান্তের বৃহৎ বাজার মহিষখলা নিয়ে আসা হয়। এর পর মহিষখলা বাজারে ক্রয়-বিক্রয় রসিদ তৈরি করে এসব অবৈধ পশু চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়া মধ্যনগর সীমান্তের চোরাকারবারের বড় রুটগুলো ভোলাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন হওয়ায় মহিষখলা ও ভোলাগঞ্জ বাজারের আর্থিক গুরুত্বও ব্যাপক।
চলমান বাংলা সনে বাজারগুলো ইজারা দেওয়ার জন্য গত জানুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ভোলাগঞ্জ বাজারের ইজারার ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং মহিষখলা বাজারের ৮১ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভোলাগঞ্জ বাজারের ইজারা পান স্থানীয় যুবলীগ নেতা মানিক মিয়া এবং মহিষখলা বাজার চলে যায় ডিআইজি আব্দুল বাতেন এবং আজিম মাহমুদের আত্মীয় রুবেল মিয়ার কবজায়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভোলাগঞ্জ বাজার দেওয়া বিএনপি নেতা মোমেন তালুকদারকে এবং মহিষখলার নিয়ন্ত্রণ পান রুবেল মিয়া। তাদের সাব-লিজ দেওয়া হয়। গেল ২১ আগস্ট ৪০০ টাকার স্ট্যাম্পে সাব-লিজের চুক্তি হয়।
ইজারাদার মানিক মিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, মোমেন তালুকদার জোর করে সাব-লিজ নিয়েছেন। মোমেন তালুকদার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মজনুর চাচাতো ভাই। এখন পর্যন্ত তিনি কোনো টাকাপয়সা পাননি।
তবে মোমেন তালুকদার বলেন, মানিক ভোলাগঞ্জ বাজারের ইজারা তাঁর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। স্ট্যাম্পে উল্লেখিত মূল্য মানিককে তখনই দেওয়া হয়েছে। মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মজনু বললেন, এসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আজিম মাহমুদ বলেন, প্রায় ৯০ লাখ টাকা ইজারামূল্য দিয়ে মহিষখলা বাজার ইজারা নিয়েছিলেন তারা কয়েকজন।
মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন বলেন, ইজারাপ্রাপ্ত হাটবাজার সাব-লিজ বা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। বাজারটি সাব-লিজ প্রদানের সত্যতা প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে, দোয়ারাবাজার সীমান্তের গরুর বাজারগুলো কিছুটা ব্যতিক্রম। স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মী জানিয়েছেন, সেখানকার গরুর হাটগুলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকরা সিন্ডিকেট করে কম মূল্যে ইজারা নিয়েছেন। ৫ আগস্টের আগে ওই বাজারগুলোতে হাসিল কাটতে নেতৃত্ব দিতেন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
- বিষয় :
- গরু চোরকারবারী