ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বাঘের আক্রমণ ঠেকাতে নাইলনের বেড়া

বাঘের আক্রমণ ঠেকাতে নাইলনের বেড়া

ফাইল ছবি

 মামুন রেজা, খুলনা 

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:১৩

কিছুদিন আগেও খাবারের সন্ধানসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে চলে আসত বাঘ। গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যেত গবাদি পশু। ঘটেছে বাঘের হাতে মানুষের প্রাণহানির ঘটনাও। ফলে আতঙ্কিত গ্রামবাসী মাঝে মধ্যেই পিটিয়ে হত্যা করত বাঘ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে লোকালয়ে বাঘ এবং অন্যান্য প্রাণী আসা ঠেকাতে সুন্দরবনের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেষ্টনী দিয়েছে বন বিভাগ। আরও ২০ কিলোমিটার বেষ্টনী দেওয়ার কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বন বিভাগ সুন্দরবনে নাইলনের বেষ্টনী বা জাল দিয়ে সুফল পেয়েছে। 
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের’ অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতায়ই নাইলনের বেষ্টনী দেওয়া হচ্ছে।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবরে মাঠ পর্যায়ে বেষ্টনী দেওয়ার কাজ শুরু হয়। প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, সুন্দরবনের যেসব এলাকায় বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব বেশি, সেখানে বেষ্টনী দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বাগেরহাটের ধানসাগর, শরণখোলা, সাতক্ষীরার কৈখালী, খুলনার কৈলাশগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বনের প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। আরও ২০ কিলোমিটার এলাকায় একই ধরনের বেষ্টনী দেওয়া হবে। বেষ্টনী তদারকির জন্য ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে; যাতে বনজীবী কিংবা দুষ্কৃতকারীরা তা ছিঁড়ে না ফেলেন। কোথাও ছিঁড়ে ফেললে তারা যাতে দ্রুত বন বিভাগকে জানান, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 
এদিকে প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘশুমারি করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আগামী ৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাঘশুমারির ফলাফল প্রকাশ করবেন। ২০১৮ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১১৪টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি। তবে এবার বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে। 

ডিএফও জানান, ঝড় ও অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের সময় পানি বেশি হলে বাঘ ও হরিণ মাটির কিল্লায় আশ্রয় নিচ্ছে। ক্যামেরা ট্রাপিং করে কোন কোন কিল্লায় বন্যপ্রাণী ওঠে, কীভাবে ওঠে, কতক্ষণ থাকে, তা নজরদারির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বনের ভেতর আরও আটটি মাটির কিল্লা তৈরির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
সুন্দরবনে প্রায় প্রতিবছর আগুন লেগে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বনের যে এলাকায় আগুন লাগার প্রবণতা বেশি, সেই ধানসাগর ও নীলকমল এলাকায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। আমুরবুনিয়া এবং নাংলি এলাকায় আরও দুটি টাওয়ার তৈরির জন্য বন অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে নেভানো যায়, সে জন্য কেনা হয়েছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ও ড্রোন। 
ডিএফও জানান, প্রকল্পের আওতায় বাঘ ও বাঘের ৪টি শিকার প্রাণীর রোগ নির্ণয় কাজ চলছে। দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট কলার স্থাপনের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে। বনের যে এলাকায় বাঘ বেশি রয়েছে, সেখান থেকে কয়েকটিকে অন্য যে এলাকায় বাঘ কম রয়েছে, সেখানে স্থানান্তর করা হবে। প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও ৪টি রেঞ্জের কমিউনিটি প্যাট্রল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের পোশাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে করা হচ্ছে মাসিক সভা। প্রকল্পে এ পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

×