ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

শেরপুরে পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ, দুই জেলায় ১০ মৃত্যু

শেরপুরে পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ, দুই জেলায় ১০ মৃত্যু

শেরপুরের নালিতাবাড়িতে ডেগে চড়ে পানি পাড়ি দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। আজ মঙ্গলবার তোলা ছবি: সমকাল

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ | ২১:২৪

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের পাঁচ উপজেলায় সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার উন্নতি হয়েছে। চারটি নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বাড়ছে ব্রহ্মপত্র নদ, দশানি ও মৃগী নদীর পানি। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। পানি নামেনি বসতঘর থেকে। এখনও প্রতিটি এলাকায় খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার নকলা উপজেলার টালকী এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে রাহিম (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। এ নিয়ে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় মোট ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় বানের পানিতে ডুবে রুসমত খান (৬২) নামে একজন মারা গেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চারপাশে পানি থাকায় মঙ্গলবার সকালে তাঁকে সড়কের পাশে দাফন করা হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলায় পানি কমেছে। কিন্তু নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় এখনও পানি নামেনি। কিছু জায়গায় পানি কমলেও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতঘরে ফিরতে পারছে না দুর্গতরা। সড়ক ডুবে আছে; ভেঙে গেছে কোথাও কোথাও। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন দপ্তর।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, এবারের বন্যায় শুধু কৃষি খাতেই ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। পৌনে দুই লাখ কৃষকের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তিন হাজার মাছের ঘের ভেসে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। 

নালিতাবাড়ী উপজেলার গাগলাজানি গ্রামের আব্দুল জব্বার বলেন, ঋণ করে টাকা নিয়ে ৫০ একর জমির পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বন্যায় সব মাছ ভেসে গেছে। এখন ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব, সে চিন্তায় আছি।

শেরপুরের খামারবাড়ির উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, এখনও অনেক জায়গায় বন্যার পানি রয়েছে। এ কারণে ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলার প্রায় সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে। পানি কমতে শুরু করেছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। 

ময়মনসিংহে পানিবন্দি দেড় লাখ মানুষ

গতকাল সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় ময়মনসিংহের তিন উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে।

পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে হালুয়াঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে এখনও পানিবন্দি অন্তত ৭৫ হাজার মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বসতবাড়ি, আমন ধানের জমি, মাছ চাষের পুকুর তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানি ও খাদ্যের সংকট। ধোবাউড়া উপজেলার অনেক এলাকায় পানি কমলেও গোয়াতলা, ধোবাউড়া সদরে বেড়েছে। এখনও উপজেলার ৭৫টি গ্রামে পানিবন্দি অবস্থায় আছে ৬০ হাজার মানুষ।

এদিকে শেরপুর থেকে নেমে আসা পানি মালিঝি ও কংস নদ হয়ে ফুলপুরের ছনধরা ইউনিয়ন দিয়ে প্রবেশ করায় ফুলপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ছনধরা ইউনিয়নে পানি কিছুটা কমলেও সিংহেশ্বর, ফুলপুর সদর ও বালিয়া ইউনিয়নে নতুন করে প্রায় ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলাটির ৩৫টি গ্রামে অন্তত ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে।

নেত্রকোনায় ২০০ গ্রামে পানি

নেত্রকোনার পাঁচ উপজেলায় এখনও প্রায় ২০০ গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী, কলমাকান্দায় উব্দাখালী, নেতাই, পূর্বধলা, নেত্রকোনা সদর ও বারহাট্টায় কংস, মগড়া নদীর পানি বেড়েছে। গতকাল সকালে বৃষ্টি হওয়ায় সোমেশ্বরী, কংস, উদ্ধাখালী, মগড়াসহ বিভিন্ন নদীর পানি বাড়ছে। উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলায় ১৭ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছে। বন্যার্তদের মাঝে চাল, ডাল, তেল এবং শিশুখাদ্য ও গোখাদ্যের জন্য নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

×