কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের মানবিক সুবিধা দেওয়ার দাবি

কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে রাখার দাবিতে সিলেটে মানববন্ধন সমকাল
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ | ২২:৪২
কারও মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে দেড় বছর, কারও পেরিয়ে গেছে এক বছর। কেউ কেউ কারাগারে আছেন আরও বেশি সময় ধরে। এ অবস্থায় কনডেম সেলে তারা কঠিন দিন পার করছেন। এসব বন্দি ন্যূনতম মানবিক সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন বন্দিদের স্বজনরা। কারাগারের কনডেম সেলে আসামিদের মানবিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট আদালত প্রাঙ্গণের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কারাগারে থাকা ফাঁসির রায় পাওয়া প্রায় ৩০ আসামির পরিবারের সদস্যরা।
দেড় বছর ধরে সিলেট কারাগারে ফাঁসির রায় নিয়ে আছেন সিলেট নগরীর ঘাসিটুলার আবদুল কাইয়ুম। মানববন্ধনে উপস্থিত তাঁর মেয়ে জাহানারা বেগম কান্না বলেন, আইনের মারপ্যাঁচে আটকে আছেন তারা। কারাগারে ন্যূনতম মানবাধিকার পাচ্ছেন না তাঁর বাবা। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কঠোর নিয়ম পালন করতে হয়। ছোট একটি ঘরে রাখা হয়েছে তাঁর বাবাকে। ওই ঘরে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
জাফলং থেকে মানববন্ধনের খবর পেয়ে বৃদ্ধ মিনা বেগম ছুটে গিয়েছিলেন আদালত প্রাঙ্গণে। তাঁর ছেলেকে বিগত সরকারের সময় মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় বলে তাঁর অভিযোগ। জোর করে তাঁর জবানবন্দি নেওয়া হয়। পরে তাঁর ছেলেকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ৬ বছর ধরে জেলে বন্দি। ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকেই তাকে ছোট একটি ঘরে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে আলো-বাতাস পর্যন্ত ঢোকে না। আমরা কারাগারে দেখা করতে পারি না।’ এ ঘটনার প্রতিকার দাবি করেন তিনি।
এক বছর ধরে কনডেম সেলে থাকা রইছ আলীর স্ত্রী কমলারুন নেছা গোয়াইনঘাট থেকে এসে সন্তানসহ মানববন্ধনে অংশ নেন। তিনি বলেন, কারাগারে দেখতে গেলেই তাঁর স্বামী কান্নাকাটি করেন। কারাগারের ছোট্ট কক্ষে তাঁর মানবেতর জীবনের কথা শুনতে শুনতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। কারাগারে কেন এত কষ্ট দেওয়া হয়, বলে কাঁদতে থাকেন তিনি।
মানববন্ধনে উপস্থিত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হোসাইন আহমদ শিপন বলেন, সব মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। যারা ফাঁসির রায় নিয়ে কারাগারে আছেন, তাদের প্রতি সবার যত্নশীল হওয়া দরকার। এটি না হলে কোনোভাবেই মানবাধিকার রক্ষা হয়েছে, সেটি বলা যাবে না। কোনো আসামি ফাঁসির রায়ের পর থেকে এমনিতে মুষড়ে পড়েন। তাই দণ্ডাদেশ কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাপন দরকার। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত উচ্চ আদালত তাঁর বিরুদ্ধে সঠিক ফায়সালা না দেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের মানবিক দিক বিবেচনা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একজন লোককে রায়ের আগ পর্যন্ত কনডেম সেলে রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
- বিষয় :
- কারাগারে