ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

হত্যাকাণ্ডে ১০ বছর ধরে বাড়িছাড়া পাঁচ পরিবার

হত্যাকাণ্ডে ১০ বছর ধরে বাড়িছাড়া পাঁচ পরিবার

জমি নিয়ে বিরোধে দুলাল হত্যাকাণ্ডের জেরে আসামিপক্ষের বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ছবি: সমকাল

কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪ | ২১:৪৭

জমি নিয়ে বিরোধে দুলাল হত্যাকাণ্ডের জেরে আসামিপক্ষের বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আদালতে হত্যা মামলাটি বিচারাধীন থাকলেও ১০ বছর ধরে ভিটাছাড়া পাঁচটি পরিবারের সদস্য। ঘটনাটি কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের দুরচাপুর গ্রামের। এ ঘটনায় আসামিপক্ষের জুলহাস খানের ছেলে উবায়দুল খাঁ তাদের বসতবাড়িতে বসবাসের জন্য আইনগত সহায়তা চেয়ে গত ১৬ অক্টোবর কেন্দুয়া থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।

জানা গেছে, জমি নিয়ে বিরোধে দুরচাপুর গ্রামের জুলহাস খানের ছেলেদের সঙ্গে প্রতিবেশী মুনসুর আলী খাঁর ছেলেদের ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর ঝগড়া হয়। এতে মুনসুর আলী খাঁর ছেলে দুলাল খাঁ আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় মুনসুর আলী খাঁর ছেলে এমদাদুল হক জুলহাস খানের ছেলে উবায়দুল খাঁসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে একই বছরের ৩১ অক্টোবর কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা করেন। 

এই হত্যাকাণ্ডের জেরে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর আসামিদের বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বাদীপক্ষের লোকজন। এতে হারিছ খানের দুটি আধাপাকা ঘর ও আরশ খানের একটি আধাপাকা ঘর, জুলহাস খাঁ, উবায়দুল খাঁ ও আলম খানের ৪টি টিনের ঘর ভাঙচুরসহ আসবাবপত্র লুট করে। এ ঘটনায় উবায়দুল হক আদালতে অভিযোগ দেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে কেন্দুয়া থানার ওসিকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ তদন্ত করে ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পুলিশ বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটে উবায়দুল খাঁদের ৬২ লাখ ২৯ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।

হত্যা মামলার প্রধান আসামি উবায়দুল খাঁ অভিযোগ করেন, ‘জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ হলেও আহত দুলাল খাঁ ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে সাজানো একটি হত্যা মামলা হয়। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন, কিন্তু হত্যার জেরে আমাদের বসতবাড়িতে হামলা-লুটপাট করে বাদীপক্ষ। তাদের কারণে ১০ বছর ধরে বাড়িতে বসবাস করতে পারি না।’ 

তার ভাষ্য, ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তার বাবা জুলহাস খান মারা যান। কিন্তু দুলাল খাঁ হত্যা মামলার বাদীপক্ষের লোকজন তার বাবাকে বসতবাড়িতে দাফন-কাফন করতে দেয়নি। পরদিন প্রতিবেশী হারিছ খানের বাড়িতে তার বাবার লাশ দাফন করা হয়।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিন গেলে দুলাল হত্যা মামলার বাদীপক্ষের উমর ফারুক বলেন, ‘উবায়দুল হকের বাবা জুলহাস খানকে আমার দাদাবাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তারা জমিজমা বিক্রি করে ভূমিহীন অবস্থায় ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাদের হাতে আমার ভাই দুলাল খাঁ খুন হলে গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে তাদের বসতবাড়ি ভাঙচুর করে। মূলত তাদের এখানে কোনো বৈধ ভিটেবাড়ি না থাকায় ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘যাদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল তারাই আমার ভাই দুলাল খাঁকে হত্যা করে। এখন কী করে আর তাদের বিশ্বাস করে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া যায়?’

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল আলম জানান, জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত দুলাল খাঁ হাসপাতালে মারা যান। এরই জের ধরে বাদীপক্ষের লোকজন উবায়দুল খাঁদের বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট করেছে। উবায়দুল খাঁদের বৈধ কাগজপত্র যাচাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে উবায়দুল খাঁদের ৫টি পরিবার বাড়িছাড়া হওয়ার অভিযোগটি তদন্ত চলছে।

আরও পড়ুন

×