ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ফরিদপুরে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হোস্টেল পরিচালক

ফরিদপুরে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হোস্টেল পরিচালক

অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে আফসানা মীম ধার করেন ৫০ লাখ টাকা

 ফরিদপুর অফিস

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ | ২৩:৩৯

ফরিদপুর শহরে বোর্ডারসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফসানা মীম। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছেন শহরের ঝিলটুলী মহল্লার আফসানা ছাত্রী হোস্টেলের ভুক্তভোগীরা।
চার বছর আগে সুফিয়া বেগমের মালিকানাধীন ১১ তলা রহমত টাওয়ারের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আফসানা ছাত্রী হোস্টেল চালু করেন মধুখালী উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মামুন মোল্লার মেয়ে আফসানা মীম। আরেকটি ফ্ল্যাটে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে সপরিবারে সেখানে থাকতেন তিনি। ১৫ দিন আগে এ দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে কন্যাসন্তান।
ভুক্তভোগীরা জানান, হোস্টেলের বিভিন্ন কক্ষে অন্তত ১২০ ছাত্রী ভাড়া আছেন। বুধবার ভোরে একটি পিকআপ ও দুটি ভ্যানে করে পরিবারের সব মালপত্র নিয়ে যান মীম। আগের রাতে তিনি হোস্টেলের ছাত্রীদের কাছ থেকে এক-দুই হাজার করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা তোলেন।

ছাত্রীরা জানান, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে মীম প্রায় ৫০ লাখ টাকা ধার করেন। বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন। মীম উধাও হওয়ার পর অনেকে হোস্টেল ছেড়েছেন। ভবন মালিকের কাছে অনেকে এক মাস সময় চেয়ে নিয়েছেন। টাকা না থাকায় না খেয়ে আছেন কেউ কেউ।
ভবন মালিক সুফিয়া বেগমের ছেলে মো. রফিক জানান, বৃহস্পতিবার বাড়িভাড়া দিতে চেয়েছিলেন মীম। পরে জেনেছেন তিনি বুধবার ভোরে কাউকে কিছু না বলে পিকআপে মালপত্র নিয়ে চলে গেছেন। ছয় ফ্ল্যাটের প্রতিটির ভাড়া ২০ হাজার টাকা করে। দুই মাসের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে রফিক বলেন, ‘ছাত্রীদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা নিরাপদেই আছেন। অনেক ছাত্রী মীমের কাছে টাকা পান বলে আমাদের জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত যা খবর, মীম প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন বিভিন্নজন থেকে।’

গতকাল সরেজমিনে হোস্টেলে গেলে কথা হয় মীমের ফুপু শাহানা বেগমের সঙ্গে। মধুখালী থেকে তিনি ভাতিজির সঙ্গে দেখা করতে এসে ফ্ল্যাটে তালা পান। শাহানা বেগম বলেন, ‘১৭ সেপ্টেম্বর আমার মেয়ে আশার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধার নেয় মীম। এক সপ্তাহের মধ্যে দিতে চেয়েছিল। মাস পার হলেও দিচ্ছে না দেখে আজ এসেছিলাম।’ হোস্টেল ফেলে মীম পালিয়েছেন জানতে পেরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন শাহানা বেগম। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জামাই জমি কিনতে সিঙ্গাপুর থেকে টাকা পাঠাইছে। কাউকে না জানিয়ে ধার দিছে মীমকে। এ কথা জামাই জানলে মেয়ের সংসার থাকবে না।’
এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হোস্টেলের সামনের বিকাশের দোকানি নিশাদ পাল। তিনি বলেন, মীম নিয়মিত লেনদেন করতেন। ২১ অক্টোবর তিনি বিকাশের মাধ্যমে ৪০ এবং ২২ অক্টোবর নগদ ৩০ হাজার টাকা নেন। বুধবার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভোরে তিনি পালিয়ে গেছেন।
পাশেই আরেক বিকাশ ও লোড ব্যবসায়ী কাজী রাজু বলেন, ‘২২ অক্টোবর সকালে আমার কাছ থেকে নগদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রাতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মীম। বুধবার শুনি তিনি পালিয়ে গেছেন।’
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আসাদউজ্জামান জানান, আফসানা মীমের উধাও হওয়ার বিষয়ে ভবনের মালিক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মীম তাদের দুই মাসের ভাড়া দেননি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×