ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

২৮ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি পদ্মায় নিখোঁজ ২ এএসআই, অভিযান চলছে

২৮ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি পদ্মায় নিখোঁজ ২ এএসআই, অভিযান চলছে

নিখোঁজ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। ছবি: সমকাল

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:২৮ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ | ১২:৫৭

কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদ্মা নদীতে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ২৮ ঘণ্টা পার হলেও তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। উদ্ধার কাজে তাদের সহযোগিতা করছেন কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

সকাল সাড়ে ১০টায় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী ও কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, খবর পেয়ে সোমবার সকাল থেকে পদ্মায় অভিযান শুরু করেন তারা। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনার ডুবুরি দল অভিযান চালায়। তবুও নিখোঁজদের না পাওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল ৮ টা থেকে পুনরায় অভিযান শুরু করা হয়েছে। তবে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। 

উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।

নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- কুমারখালী থানার সহকারী উপপরিদর্শক সদরুল হাসান (৪০)। তিনি পাবনার আতাইকুলা থানার কাজিপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের বড় ছেলে। আরেক সহকারী উপরিদর্শক মুকুল হোসেন (৪০)। তিনি মেহেরপুরের কালাচাঁদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ছেলে।

এর আগে সোমবার ভোরে পদ্মা নদীতে দুই এএসআই নিখোঁজ হন। তবে তাদের নিখোঁজের কারণ নিয়ে ‘ধুম্রজাল’ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইলিশ মাছ লুটপাট করতে গিয়ে জেলেদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে তারা নিখোঁজ হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন চারজন। তাদের মধ্যে দুইজন ইউপি সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে।  

জেলেরা অভিযোগ করেছেন, সাদা পোশাকে আসা পুলিশ সদস্যরা দু'জন ইউপি সদস্যকে নিয়ে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারকারী জেলেদের নৌকায় যান। সেখানে থেকে মাছ লুট করে ফিরছিলেন। ডাকাত ভেবে তাদের ওপর হামলা করে জেলেদের একটি অংশ।

সংবাদ পেয়ে জেলেদের নেতারা গিয়ে আহত অবস্থায় একই থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ছলিম ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটনকে উদ্ধার করেন।

কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসাধু জেলেরা নদীতে মাছ ধরছিল। গভীর রাতে দুই ইউপি সদস্য ও ৬ পুলিশ সদস্য পদ্মা নদীর বেড় কালোয়া যান। তারা অভিযানের কথা বলে কয়েকজন জেলের কাছ থেকে ইলিশ মাছ ও তেল ছিনিয়ে নদীর অন্য প্রান্তে চলে যান। পরে শিলাইদহের শ্রীখোলে তাদের ওপর হামলা হয়।

বেড় কালোয়ার জেলে নেতা ইয়ারুল ইসলাম বলেন, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জেলেরা প্রথমে তাকে কল করে নদীতে ঝামেলার কথা জানান। তখনই তেল ও মাছ লুটপাটের তথ্য পান। পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৫টার দিকে এএসআই সদরুল ফোনে তাকে বলেন, 'ভাই আমরা বিপদে আছি, সাহায্য করেন।' তখন নৌকা নিয়ে তারা চার জেলে গিয়ে এসআই নজরুলসহ ৪ পুলিশ সদস্য ও দুই ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করেন। এ সময় এসআই নজরুলের মাথা ফাটা ছিল।

ইয়ারুলের ভাষ্য, পুলিশ সাদা পোশাকে ছিল। দুই ইউপি সদস্য জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতে পুলিশ নিয়ে এসেছিলেন। তাদের ডাকাত ভেবে ৩০-৪০ জন জেলে মারধর করেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আহত ইউপি সদস্য ছানোয়ার হোসেন ছলিম বলেন, রাতে এসআই নজরুলের স্যারের সঙ্গে নৌকায় করে চর সাদিপুরে আসামি ধরতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে ৪০-৫০ জন তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের মুখ বাঁধা ছিল।

কুমারখালী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার ভাষ্য, একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি ধরতে গিয়েছিলেন তাদের ৬ সদস্য। এ সময় দুই নৌকার সংঘর্ষে দুই এএসআই নিখোঁজ হন। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। অন্য চারজন সাঁতরে তীরে আসেন।

আরও পড়ুন

×