৯৭ ভাগ কাজ শেষেও হয়নি জমি অধিগ্রহণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরে মহানন্দা রাবার ড্যামের কাজ শেষ পর্যায়ে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা শেষ হলেই উদ্বোধন সমকাল
এ কে এস রোকন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৭
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহাইচরে মহানন্দা রাবার ড্যামের কাজ শেষ পর্যায়ে। নদীর পাড় বাঁধানো, রাস্তা পাকাকরণসহ মাত্র তিন শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা রয়েই গেছে। একটি টাকাও পাননি ভূমি মালিকরা। ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করলে উল্টো হয়রানি করা হচ্ছে তাদের।
ভুক্তভোগী রেজাউল করিম জানান, জমি মালিকদের করা একটি মামলায় আদালত অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সে অর্থ পরিশোধ করেনি জেলা প্রশাসন।
মাসুদুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক জানান, অধিগ্রহণের বিষয়ে মানা হয়নি আদালতের নির্দেশনা। চলতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ রাবার ড্যামের পাম্প উদ্বোধন করতে এলে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা অধিগ্রহণের টাকার দাবিতে গেলে তাদের ওপর হামলা ও মারধর করে সাবেক এমপির ক্যাডাররা। এরপর উল্টো জমি মালিকদের নামেই দেওয়া হয় সরকারি কাজে বাধাদানের মামলা।
তবে পাউবো জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব বলেন, নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সরকারি কাজে বাধাদানে মামলা হয়েছিল। সেটিও তুলে নেওয়া হবে।
২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। আড়াই বছর সমীক্ষা শেষে ১৮৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন করে আইডব্লিউএম। এরপর ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একনেকে প্রকল্প পাস হয়। ২০১৭ সালে কাজ শুরুর কথা থাকলেও নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায়। ২১ সালের ১ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বিআইসি-এসএসআরআই (জিভি) কাজ শুরু করে। প্রথম বছর ৪০ শতাংশ কাজ করার পর জমি নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৩০ মে সময় বেঁধে দেওয়া হলেও কাজ হয় ৭০ শতাংশ। পরে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়।
জমির জটিলতা তখনও কাটেনি। পরে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা ও ৩৬.০৫ কিলোমিটার নদী খননে ২৬ কোটি টাকা যুক্ত করে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১৮২ কোটি টাকা। এরপরও ক্ষতিপূরণের টাকা না দেওয়ায় গত বছরের এপ্রিলে পাম্প হাউস উদ্বোধনের সময় ভূমি মালিকরা বিক্ষোভ করলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ফের ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ৩৪ কোটিসহ ৬৪ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ২৯ আগস্ট সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৬ কোটি টাকায়। তিন মাসের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করে ১৫ জুন কাজ শেষ হবার কথা। ৯৭ ভাগ কাজ শেষ হলেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা রয়েই গেছে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা লেবার শেড ও বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী রাখার জন্য বার্ষিক চুক্তি করেন। ১২০ দিনের মধ্যে অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে ২১টি খতিয়ানের ১৫০ পরিবারের ৬.৩৭ হেক্টর জমি ব্যবহার করেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেয়নি। জমি মালিকরা অধিগ্রহণের টাকার দাবি করলে সরকারি কাজে বাধাদানের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। প্রতিবাদে গত বছর ২৮ ডিসেম্বর পাউবো অফিস ঘেরাও করে সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ জেলা প্রশাসক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধেও আদালতে মামলা করেন। বিচারক চলতি বছরের ৩১ মার্চ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত বিসারত আলী জানান, এখানকার জমিগুলো ৩ ফসলি। ৩ বছর ফসল আবাদ করতে পারছেন না। ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন করার অপরাধে ৯ জনের নামে এবং অজ্ঞাত ৩০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাঁর ছেলেকেও জেলে যেতে হয়েছে। একই দাবিতে জেলে যেতে হয়েছে আসাদুজ্জামান টিটো ও তাঁর ভাই আব্দুর রশিদকে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বিআইসি-এসএসআরআই (জিভি) প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান জানান, ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ও জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে তারা বাধ্য হয়েছিলেন। এখন শুধু পাড় বাঁধার কাজ বাকি। আসন্ন শুষ্ক মৌসুমেই ড্যামের সুফল ভোগ করবে এলাকাবাসী।
জেলা প্রশাসক আব্দুস সালাম জানান, তিনি সবেমাত্র যোগদান করেছেন। তাঁর কাছে আগের কোনো তথ্য নেই। তবে নদীতে খাস ও ব্যক্তিমালিকানার জমি থাকায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। শিগগিরই এসব সমস্যা সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।
- বিষয় :
- রাস্তা সংস্কার