বেতন পরিশোধের আশ্বাসে ৫২ ঘণ্টা পর শ্রমিকদের অবরোধ প্রত্যাহার

ফাইল ছবি
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৫:৪৫ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৫:৫৪
বেতন পরিশোধের আশ্বাসে টানা ৫২ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছে শ্রমিকরা। সোমবার দুপুরে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা।
জানা যায়, সোমবার দুপুরে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদ মিয়া ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে মীমাংসা করার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। এরপর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুপুর আড়াইটার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
এর আগে শনিবার সকালে শ্রমিকরা মালেকের বাড়ি, কলম্বিয়া মোড় এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের পাঁচটি কারখানার ১ হাজার ২০০ শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বকেয়া বেতন ও কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখার দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা দফায় দফায় বুঝিয়েও মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে পারেননি। শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবেন।
শ্রমিকরা জানান, গত ২৩ অক্টোবর বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও মালিকপক্ষ তা করেনি। গত ২৪ অক্টোবর সেনাবাহিনী, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনা সভা হয়। ওই সভায় সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ৩ নভেম্বর এবং অক্টোবর মাসের বেতন ২০ নভেম্বর পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার টিএনজেড গ্রুপের জরুরি অফিস নোটিশে বলা হয়– শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া বেতন ও ভাতা এদিন নিজ নিজ বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা ২৮ নভেম্বর দেওয়া হবে।
এ বিষয় বিবেচনা করে সবাইকে শনিবার থেকে উৎপাদনে মনোযোগী হয়ে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু শনিবার গ্রুপ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত জরুরি নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি, সেই সঙ্গে জানাচ্ছি, গত ৭ নভেম্বর পূর্বঘোষিত নোটিশের মাধ্যমে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার পরেও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা অনিবার্য করণে পরিশোধ করতে পারি নাই। আশা করছি, আগামী মাসের কোনো এক সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।’ নোটিশে আরও বলা হয়, ‘বর্তমানে কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই শনিবার কারখানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অতি শিগগির বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে কারখানার কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
শ্রমিকরা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ সময় পার করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার পরিশোধের তারিখ জানালেও বেতন দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করতে হয়েছে।
এতে শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত শনিবার সকাল আটটা থেকে কারখানার সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। ওই দিন সকাল নয়টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এর পর থেকেই মহাসড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৫০ ঘণ্টা ধরে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও চালকেরা। অনেকে ট্রেনে বা বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে গন্তব্যে যাতায়াতের চেষ্টা করছেন।
আন্দোলন শুরুর প্রথম দিন শনিবার সারারাত শ্রমিকরা রাস্তায় কাটিয়েছেন। সালমা খাতুন নামে এক শ্রমিক জানান, বেতনের টাকায় আমার ও আমার বাবার সংসার চলে। ঘর ভাড়া দিতে হয়। দোকান থেকে চাল-ডাল বাকিতে নিয়ে খান। দোকানদার বাকি দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘরের মালিক বের হয়ে যেতে বলেছেন। আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই।
স্থানীয়রা জানান, এত দীর্ঘ সময় ধরে কোথাও শ্রমিক আন্দোলন তারা দেখেননি। আন্দোলনের কারণে আশপাশের জেলাগুলোয় সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিকল্প উপায়ে কেউ কেউ রাজধানীতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সেসব পথে যানজটের কারণে শেষ পর্যন্ত যানবাহন নিয়ে ঢাকায় ঢুকতে পারেননি। অসংখ্য মানুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এই অবস্থায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ করে ট্রাফিক আপডেট জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক ও মিডিয়া) ইব্রাহীম খান।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গতকাল থেকে আশপাশের ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, আজও খুলেনি এসব কারখান।
সারোয়ার আলম আরও বলেন, কারখানা মালিকের প্রতি শ্রমিকদের কোনো রকম আস্থা নেই। বারবার কথা দিয়েও কথা না রাখার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেও আমরা পারিনি। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, টিএনজেড গ্রুপের দুই মালিকের মধ্যে একজন দেশের বাইরে আছেন। যিনি দেশে আছেন তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বকেয়া বেতন পরিশোধে টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
- বিষয় :
- গাজীপুর
- শ্রমিকদের আন্দোলন
- অবরোধ প্রত্যাহার