‘হ্যারিয়ার’ কিনে হঠাৎ আলোচনায় বিএনপি নেতা হাবলু মোল্লা

হ্যারিয়ার গাড়ি- কার থিওরি বিডির ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
সাজ্জাদ রানা, কুষ্টিয়া
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:১৪ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪০
পুরোনো জিপ ছেড়ে নতুন হ্যারিয়ার হাঁকাচ্ছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ তাঁর বদলে যাওয়া নজর কেড়েছে। জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীর মধ্যেও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে হ্যারিয়ার নিয়ে।
জানা যায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এলাকায় বেড়েছে বিএনপি নেতাদের আধিপত্য। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদারের কাছ থেকে দলটির নেতারা দুটি দামি হ্যারিয়ার ‘উৎকোচ’ হিসেবে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই ঠিকাদার কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদী রক্ষা বাঁধের বড় অংশের কাজ পেয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রথমে হাবলু মোল্লা কাজ করতে হলে বড় অঙ্কের চাঁদার পাশাপাশি নতুন গাড়ি দাবি করেন আওয়ামী লীগপন্থি ওই ব্যবসায়ীর কাছে। এক পর্যায়ে গাড়ির বিষয়ে সমঝোতা হয় হাবলু মোল্লাসহ কয়েক নেতার। হাবলুর এক ঘনিষ্ঠ জানান, আগস্টের শেষ দিকে হাবলু পুরোনো জিপ বিক্রি করার জন্য কয়েকজনের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে এলাকার এক ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকায় জিপটি কিনে নেন। মূলত হ্যারিয়ার পাওয়ার পর যাতে বিতর্ক না ওঠে, এ জন্য হাবলু পুরোনো জিপ বিক্রির প্রচার চালান। যদিও ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে হাবলুর বৈঠক এবং হ্যারিয়ার নিয়ে বোঝাপড়ার কথা বিএনপির অনেকেই জেনে যান।
কয়েক সপ্তাহ আগে ঢাকার একটি শোরুম থেকে হ্যারিয়ার (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৪-৫২৮১) বুঝে নেন হাবলু। বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে এটিতে চড়ে অংশ নিচ্ছেন তিনি। হাবলু মোল্লার গাড়িটি ৩০ আগস্ট নিবন্ধন হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এমটিবি সেন্টার, ২৬ গুলশান অ্যাভিনিউ শাখার অধীনে। দায় দেখানো হয়েছে ব্যাংকের নামে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির এক নেতা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারি কাজ নিয়ে আওয়ামী লীগপন্থি এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গাড়ি ও টাকা নেওয়ার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবলু অস্ত্রের কারবারসহ নানা কারণে এলাকায় সমালোচিত। তিনি একাধিকবার জেলও খেটেছেন। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও, হাবলু প্রার্থী হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
হ্যারিয়ারের বিষয়ে জানতে চাইলে হাবলু মোল্লা এ প্রতিবেদককে অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন। তিনি বলেন, ‘জেলা বিএনপির বর্তমান নেতাদের অনেকেই ফকির। আমি জমিদারের ছেলে। আমার সম্পদের অভাব নেই। একসঙ্গে এ রকম গাড়ি চারটি কিনতে পারি। দলের কিছু নেতা আমার বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’
হাবলু মোল্লা দাবি করেন, পুরাতন জিপ বিক্রি করে, সঙ্গে ব্যাংক লোন নিয়ে হ্যারিয়ার কিনেছেন। যে ঠিকাদারের কথা বলা হচ্ছে, তাঁর কাছে একটি কাজের জন্য লাইসেন্স আনতে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার জানান, বিষয়টি তারাও শুনেছেন। তদন্ত করে দেখা হবে। বিএনপিতে কোনো অপরাধীর জায়গা হবে না। কারও অপকর্মের দায় দল নেবে না।
- বিষয় :
- গাড়ি ক্রয়
- হ্যারিয়ার
- বিএনপি নেতা