ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ভাণ্ডারিয়া রাজপাশা দারুশ শরিয়াত দাখিল মাদ্রাসা

রিমালে বিধ্বস্ত ভবন খোলা মাঠে পাঠদান

রিমালে বিধ্বস্ত ভবন খোলা মাঠে পাঠদান

বিধ্বস্ত রাজপাশা দারুশ শরিয়াত দাখিল মাদ্রাসার টিনশেড ভবনের সামনে চলছে ক্লাস সমকাল

পিরোজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | ২২:৩২

পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয় রাজপাশা দারুশ শরিয়াত দাখিল মাদ্রাসার টিনশেড ভবনটি। শ্রেণিকক্ষ সংকটে দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত মাঠেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। এতে বৈরী আবহাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ওই মাদ্রাসায় দ্রুত একটি পাকা ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। 
জানা গেছে, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগে ১৯৮৫ সালে রাজপাশা দারুশ শরিয়াত দাখিল মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার দুই বছর পরে ১৯৮৭ সালে মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। সেখানে সরকারিভাবে বরাদ্দ পেয়ে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। মাদ্রাসাটিতে শিশু শ্রেণি থেকে দাখিল পর্যন্ত ক্লাস রয়েছে। সেখানে ভাণ্ডারিয়া ও পার্শ্ববর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে আসছে। গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে মাদ্রাসার ৬ কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেড ঘরটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ঝড়ে ৫টি শ্রেণি কক্ষ এবং অধ্যক্ষ ও শিক্ষক মিলনায়তনসহ সব কক্ষের আসবাবপত্রও বিনষ্ট হয়। প্রায় ৬ মাস ধরে শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসা মাঠে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। মাদ্রাসার ভবন না থাকায় কোমলমতি শিশুদের রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করতে হচ্ছে। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে।  
মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালে মাদ্রাসার টিনশেড ভবনটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ক্লাস না করলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়বে। তাই রোদের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে তাদের পাঠদান চলছে। দ্রুত মাদ্রাসায় একটি পাকা ভবন নির্মাণের দাবি জানায় তারা। 
মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে মাদ্রাসাটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে উন্মুক্ত স্থানে ক্লাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টি হলে কখনও পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টারের নিচে ক্লাস নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে ক্লাস করতে গেলে না নানা বাধা-বিপত্তি আসে। উন্মুক্ত স্থানে ক্লাস করতে তাদের অনেক অসুবিধা হচ্ছে। 
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. লামিয়া আক্তার জানায়, মাদ্রাসায় লেখাপড়ার কোনো পরিবেশ নেই।  শ্রেণিকক্ষ না থাকায় তাদের অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, ঠিকমতো পাঠদান কার্যক্রম না চললে তাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
শিক্ষার্থী অভিভাবক আব্দুর কুদ্দুস ও রুবিনা বেগম বলেন, মাদ্রাসাটি প্রায় চার দশকের পুরোনো। এখানে পড়াশোনার মান ও ফলাফল ভালো। এ কারণে তারা তাদের সন্তানকে এই মাদ্রাসায় 
ভর্তি করিয়েছেন। মাদ্রাসার পুরোনো টিনশেড ঘরটি ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে। খোলা জায়গায় 
ক্লাস করতে বাচ্চাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শিগগির মাদ্রাসায় একটি পাকা ভবন নির্মাণের দাবি জানান তারা।
মাদ্রাসার সুপার মো. নূরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসাটিতে একটি মাত্র টিনশেড ভবন ছিল। একই ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও পাঠদান হতো। ঘূর্ণিঝড় রিমালে মাদ্রাসার সে ভবনটি ভেঙে গেছে। যে কারণে খোলা মাঠে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। 
ভাণ্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াছিন আরাফাত রানা বলেন, ওই মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করতে পার্শ্ববর্তী ৫২ নম্বর রাজপাশা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আপাতত সেখানে পাঠদান চলবে। যত দ্রুত সম্ভব মাদ্রাসার জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

আরও পড়ুন

×