ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

এসিড ছুড়ে ছিনতাই

যন্ত্রণায় ছটফট ছোট্ট শিশু থামছে না মা-বাবার কান্না

যন্ত্রণায় ছটফট ছোট্ট শিশু থামছে না মা-বাবার কান্না

মা সাথী রানীর সঙ্গে বিজয়িনী– পুরোনো ছবি

আব্দুল হামিদ

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:২৮ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:৩৭

হাসপাতালের শয্যায় ছটফট করছে দুই বছরের বিজয়িনী হালদার। সন্তানের কষ্টে নিজেকে ধরে রাখতে পারছেন না মা সাথী রানী হালদার। তিনি নিজেও দগ্ধ। বাবা জয় কুমার হালদার কেঁদেই চলেছেন। তাদের কষ্ট উপশমে স্বজনের সান্ত্বনার কোনো ভাষা যথেষ্ট নয়।

সাথী ও বিজয়িনী বৃহস্পতিবার ঢাকার তুরাগের কামারপাড়া এলাকায় ছিনতাইকারীর ছোড়া এসিডে দগ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে মা-মেয়ে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। সরেজিমন শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের সাত তলায় নারী ও শিশু বিভাগের বাইরে অপেক্ষমাণ জয় কুমার হালদারের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ভর্তি করা হয়। এর পর থেকে কলিজার টুকরা মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি। নিষ্পাপ মেয়েটি যন্ত্রণায় ছটফট করছে। বাইরে বসেই ওর কান্নার শব্দ কানে আসে। নিজেকে খুব অসহায় লাগে। সারারাত সে কান্নাকাটি করেছে। আমি এসিড হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এসিড হামলার নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে জয় বলেন, সকালে অফিসের উদ্দেশে বের হওয়ার সময় সাথী বলেছিল, স্যালুন থেকে সে বাবুর চুল কাটিয়ে আনবে। আমার তো কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। শুধু ছিনতাই করার জন্য এটি হয়েছে– বিশ্বাস হয় না। কারণ তারা তো আমার স্ত্রীর গলা থেকে চেইন আগেই ছিঁড়ে ফেলেছে। পালানোর সময় কেন এসিড ছুড়বে? 

জয়ের বোনজামাই গণেশ চন্দ্র হালদার জানান, বিজয়িনীর বাবা জয় কুমার বাসার পাশেই টিএসআর নামে তৈরি পোশাক কারখানায় স্যাম্পল ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত। মা সাথী রানী গৃহিণী। তিন মেয়ের বড়জন জয়শ্রী হালদার সুমালি তৃতীয় ও মেজো মেয়ে জয়শ্রী হালদার জবা প্লেতে পড়ে।

তিনি জানান, বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে– ভাবি (সাথী রানী) বাবুকে স্যালুন থেকে চুল কাটিয়ে বাসায় ফিরছেন। এক ব্যক্তি তাঁকে অনুসরণ করছে। মা-মেয়ে ভবনে ঢুকে বাসার সামনে এসে কলিং বেল দেওয়ার আগ মুহূর্তে ওই ব্যক্তি ডাক দেয়। বৌদি  পেছন ফিরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর গলার চেইন ধরে টান দেয় ওই অনুসরণকারী। বৌদি চিৎকার করলে হাতে থাকা বোতলের তরল পদার্থ মা-মেয়ের দিকে ছুড়ে মেরে দৌড়ে পালিয়ে যায় সে। পরে বাসা থেকে দুই মেয়ে বেরিয়ে এসে কান্নাকাটি শুরু করলে ভবনের অন্যান্য বাসিন্দা এসে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা যায়, তাদের ওপর এসিড হামলা হয়েছে।

জয় কুমারের ভাই অশ্বিনী হালদার জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই তারা তুরাগ থানায় মামলা করেছেন। ছিনতাইকারীর হাতে এসিড পৌঁছে যাওয়া খুবই ভয়ংকর। হামলাকারীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

অশ্বিনী হালদার আরও বলেন, শুক্রবার সাথীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তার ডান চোখ সাদা এবং মুখমণ্ডল ফুলে গেছে। সাথীর মুখই এসিডে দগ্ধ বেশি হয়েছে। ভাতিজির শরীরে কমবেশি পড়েছে। পুরো শরীর ব্যান্ডেজ করা। দু’জনকে নিয়েই চিন্তা বাড়ছে সবার।

তুরাগ থানার ওসি মোহাম্মদ রাহাৎ খান জানান, ভুক্তভোগীদের পরিবার থানায় মামলা করেছে। এটি নিছক ছিনতাই নাকি অন্য কিছু– এ ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। অপরাধী শনাক্ত হয়েছে। শিগগির তাকে ধরা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন

×