ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অনুদান

চেক পেয়ে কাঁদলেন কাঁদালেন স্বজনরা

চেক পেয়ে কাঁদলেন কাঁদালেন স্বজনরা

ফাইল ছবি

বরিশাল ব্যুরো

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ০২:২৮

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গত ১৯ জুলাই শহীদ হন ওয়ার্কশপ শ্রমিক বানারীপাড়া উপজেলার পূর্ব বেতাল গ্রামের আল আমিন রনি (২৪)। তাঁর স্ত্রী মীম আক্তার তখন ছিলেন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত ৪ নভেম্বর মেয়ে রোজার জন্ম হয়। ১৯ দিনের রোজাকে কোলে নিয়ে শনিবার মীম শহীদ অনুদানের অর্থ হাতে নিতে যখন মঞ্চে উঠলেন, তখন চারদিক নীরব। দর্শক সাড়িতে বসা মীমের মা ফেরদৌসি আক্তার তখন ডুকরে কেঁদে চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়ালেন। অনেক সান্ত্বনা দিয়েও তাঁর কান্না থামাতে পারছিলেন না কেউ। চেক হাতে মীম মঞ্চ থেকে নেমে এলে জড়াজড়ি করে মা-মেয়ের কান্নায় অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি অনেকে। 

শনিবার বরিশালে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলোর হাতে অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এমনই বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শুধু মীম ও তাঁর মা নন, অনুদানের চেক পেয়ে এ দিন অশ্রু আটকে রাখতে পারেননি অনেক শহীদের মা-বাবা-বোন-ভাইসহ স্বজনরা। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নিহত প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। বরিশাল বিভাগের মোট ৭৯ জন শহীদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়। 

অনেক স্বজন নিহতের ছবি নিয়ে অনুষ্ঠানে যান। চেক পেয়ে ছবি জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তারা। তাদের অভিযোগও অনেক। কেউ সংসারে উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন। আবার নিহত ব্যক্তিকে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ও মামলা বাণিজ্য করারও অভিযোগ করেছেন কয়েকজন স্বজন। তবে সবার দাবি, তারা স্বজনের খুনিদের বিচার চান। সবার আকুতি শহীদদের নিয়ে যেন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক মহল স্বার্থ হাসিল না করেন। 

বরগুনার বেতাগী উপজেলার টিটু (৩০) ঢাকায় প্রাইভেটকার চালাতেন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীতে গুলিতে শহীদ হন তিনি। টিটুর স্ত্রী আয়শা বেগম ও তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে গতকাল অনুদানের টাকা নিতে যান নিহতের বাবা আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, আগে রিকশা চালাতাম। দুই সন্তান আয় শুরু করার পর রিকশা চালানো ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন টিটুকে হারিয়ে তাঁর সন্তানদের ভরণপোষণে বৃদ্ধ বয়সেও বেতাগী শহরে আবার রিকশা চালাচ্ছি। ছেলে হত্যার বিচার চাইলে বিপদ হওয়ার আশঙ্কায় তিনি মামলাও করেননি। 

মামলা না করেও বিপদে আছেন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া গ্রামের শহীদ এমদাদুলের হকের (২৭) পরিবার। ২০ জুলাই ঢাকার উত্তর বাড্ডায় গুলিতে শহীদ হন তিনি। তাঁর রিকশাচালক বাবা আব্দুস সোবাহান বলেন, একই গ্রামের সাইফুল নামে এক ব্যক্তি ঢাকায় থাকেন। এমদাদুল হত্যার অভিযোগে প্রায় দুইশ’ জনের বিরুদ্ধে সাইফুল ঢাকায় মামলা করেছেন বলে শুনেছেন। মামলায় ধাওয়া গ্রামের নিরীহ কয়েকজনকে আসামিও করা হয়েছে। এমদাদুলের ভাই মো. হাসান জানান, একই গ্রামের হলেও সাইফুলকে তারা চেনেন না। শুনেছেন তিনি নাকি জামায়াতের রাজনীতি করেন। গ্রামে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা মামলা থেকে মুক্তি পেতে এমাদুলের পরিবারের লোকজনদের ধরাধরি করছে। 

একই ধরনের অভিযোগ করেন ৫ আগস্ট বিকেলে সাভারের আশুলিয়ায় গুলিতে শহীদ রুবেল হোসেনের (২২) পরিবারের। তাদের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নে। রুবেলের বোন লিজা আক্তার জানান, তাদের চাচাত ভাই খলিলুর রহমান আশুলিয়া থানায় মামলা করেছেন। এতে নাকি ঢাকার প্রভাবশালী অনেক নেতা এবং মঠবাড়ি ইউনিয়নের অনেককে আসামি করা হয়েছে। অথচ এ মামলা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তাঁর ভাইয়েরা লেখাপড়া না জানায় খলিল সুযোগ নিয়েছেন। 

অনুষ্ঠানে সারজিস আলম বলেন, আগামীতে যে সরকারই আসুক শহীদ পরিবারের স্মৃতি যেন অক্ষুণ্ন থাকে, সে ব্যবস্থা তারা করবেন। শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি সহায়তাও অব্যাহত থাকবে। প্রত্যেক পরিবারের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×