৫ আগস্ট বিদ্যুৎস্পর্শে মৃত্যু
৩১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আবেদন, জানেন না বাদী-নিহতের পরিবার

রকিবুল হাসান রকি। ফাইল ছবি
হাসান হিমালয়, খুলনা
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭:০৮ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭:৩৩
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী গ্রামের যুবক রকিবুল হাসান রকির মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বাদী ও নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম গাজী। সরকারি সাহায্যের কথা বলে গত রোববার দুই ব্যক্তি গ্রামের বাড়ি গিয়ে রকিবুল হাসানের মৃত্যু সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিয়ে যান। শুক্রবার লোকমুখে মামলার বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। রোববার দুপুরে রফিকুল ইসলাম গাজী মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে এ তথ্য জানান।
এর আগে রোববার সমকালে ‘৫ আগস্ট মৃত্যু বিদ্যুৎস্পৃর্শে, আবেদন হত্যা মামলার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি দেখে সকাল সাড়ে ১০টায় গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি প্রতিবেদকের সঙ্গে রফিকুল ইসলাম গাজীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন।
গত ৫ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আনন্দ মিছিল করে জনতা। এ সময় বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা টাঙাতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃর্শে মারা যান রকিবুল হাসান রকি। এ ঘটনার তিন মাস পর গত ২১ নভেম্বর রকিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন জমা দেওয়া হয়।
মামলার আবেদনে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, কেসিসির কাউন্সিলর, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে তাদের অনেকেই ছাত্রদের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নেন। আবার ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন এমন কয়েকজনও রয়েছেন আসামির তালিকায়। খুলনায় স্বেচ্ছাসেবী কাজে সম্পৃক্ত নির্দলীয় ব্যক্তি, ব্যবসায়ীদের নির্ভুল নাম ও পদবী দেখে মামলাটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু শনিবার গ্রামের বাড়ি গিয়ে মামলার বাদিকে পাওয়া যায়নি।
আজ রোববার রফিকুল গাজী মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ছেলের মৃত্যুর পর চায়ের দোকানের অল্প আয় দিয়ে টেনেটুনে সংসার চলছে। গত রোববার দুটি ছেলে বাড়িতে আসে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ছেলের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
শনিবার লোকমুখে মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা রফিকুল ইসলামের বাড়িতে যায় এবং স্ট্যাম্পে সই করতে জোরাজুরি করে। বাধ্য হয়ে মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান বলে এ প্রতিবেদককে জানান তিনি।
গ্রামবাসী জানান, চাঁদখালী গ্রামের রফিকুল ইসলাম গাজী চোখে দেখেন না। চা বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রকিবুল হাসান রকি ছিলেন বড়। রকি খুলনার বিএল কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। খুলনায় থাকতেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরে কলেজ বন্ধ এবং কারফিউ জারি হলে গ্রামে গিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। আন্দোলন সফলের পর তার করুণ মৃত্যুতে সবাই শোকাহত। তবে এভাবে মিথ্যা দেওয়ার বিষয়টি মানতে পারছেন না তারা।
মামলার বিষয়টি প্রথম সাংবাদিকদের জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনার বিএল কলেজের শিক্ষার্থী সাজিদুল হাসান বাপ্পী। ওই দুই যুবকের ছবি দেখিয়ে পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আন্দোলনে তারাও ছিলেন। কিন্তু বিস্তারিত পরিচয় জানেন না। মামলার আবেদন বা আসামিদের নাম কিভাবে এসেছে তাও তিনি জানেন না।