ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতা বেদখলে বনের জমি

সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থতা বেদখলে বনের জমি

ফাইল ছবি

 প্রণীত রঞ্জন দেবনাথ, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:১৮

কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এই বনের ভূমি জরিপ হয়নি। নির্ধারিত সীমানা চিহ্নিত না করায় ২৮ বছরে উদ্যানের অনেক জমি বেদখল হয়ে গেছে; যা নিরূপণ কঠিন হয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জন্য।
বর্তমানে এ নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বন বিভাগকে। ভূমি জরিপ না হওয়ায় উদ্যানের জমি কোথায়, কার দখলে এবং কতটুকু আছে তা নিশ্চিত করতে জটিলতায় পড়েছে বিভাগ। এতে করে বেদখল হওয়া সব জমি উদ্ধার করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে। এরই মধ্যে পৃথক অভিযানে বেদখল হওয়া ১০ একর জমি উদ্ধার হয়েছে। তবে সীমানা চিহ্নিত না থাকায় উদ্ধার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, লাউয়াছড়া বনের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি আছে। বনের জমি আছে। জরিপ না হওয়ায় সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যে জমিগুলো দখলমুক্ত করা হচ্ছে, সীমানা নির্ধারণ না থাকায় খুঁটি মেরে সীমানা চিহ্নিত করার কাজ করা যাচ্ছে না। জরিপ হলে বোঝা যেত, বনের সীমানা কতটুকু। সে ক্ষেত্রে বনের জমি উদ্ধার ও সংরক্ষণ সহজ হতো।
বন বিভাগের এ কর্মকর্তা আরও জানান, বনের জমি উদ্ধার করে গাছ লাগানো হয়েছে। জমি নিয়ে অনেক ব্যক্তির সঙ্গে বন বিভাগের মামলাও রয়েছে। এ ছাড়া লাউয়াছড়া বনের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থাকায় বনের জমির সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটি করা সম্ভব হলে দখল সব জমি উদ্ধার করতে সহজ হবে।
জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর। ১৯৯৬ সালে সরকার লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। এই বনে ১৬৭ প্রজাতির গাছ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ৫৯ প্রজাতির সাপসহ ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২২ প্রজাতির উভচরসহ অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রাণীর আবাসস্থল বলে তথ্য রয়েছে। দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
বন বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, জরিপের মাধ্যমে উদ্যানের সীমানা নির্ধারণ করে ভূমি সংরক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। লাউয়াছড়ার আশপাশে গ্রাম ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থাকায় সেখানকার অধিকাংশ মালিক উদ্যানের জমি কৌশলে দখলে নিয়েছেন। বিভাগের তথ্য মতে, বনের ১৫৫ একর জমি নিয়ে বন বিভাগ ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে মামলাও চলমান।
বন বিভাগ জানায়, সম্প্রতি বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উদ্যোগে পৃথক দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের দখলে থাকা প্রায় ৫ একর, ২২ সেপ্টেম্বর কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লাউয়াছড়ার বটতলী এলাকায় জমশেদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির দখলে থাকা এক একর ও ৩ নভেম্বর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বদরুল আলম জেনারের দখলে থাকা ৪ একর জমি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে জাতীয় উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমিটরি সংলগ্ন এলাকার ওই জমি ২০১৮ সালে উদ্ধারের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। একইভাবে বনের আরও জমি বেদখলে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। জরিপ করে সীমানা নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো উদ্ধার করা কঠিন।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী আহাদ মিয়া জানান, বনের জায়গা অনেকেই দখল করে বিভিন্ন বাগান করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সঙ্গেও বনের জায়গা দখলে আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সীমানা নির্ধারণ না থাকায় সহজেই জায়গা দখল হচ্ছে। দ্রুত সময়ে উদ্যানের জায়গা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
পদক্ষেপের ব্যাপারে বন বিভাগ বলছে, জরিপের জন্য বিভিন্ন সময় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে জরিপ অধিদপ্তরসহ প্রতিটি পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জরিপের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তবে সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা এমরান হোসেন জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিমাপের জন্য সিলেট অফিসে কোনো চিঠি আসেনি। বন বিভাগ থেকে চিঠি হয়তো ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, লাউয়াছড়ায় কখনও জরিপ হয়নি। কিছু জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। উদ্যানের জমি মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পরই উদ্ধার কাজ চালানো হচ্ছে। এখন জরিপটা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন

×