ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অর্ধেক পুরুত্বে কার্পেটিং ধুলার ওপরই বিটুমিন

অর্ধেক পুরুত্বে কার্পেটিং ধুলার ওপরই বিটুমিন

ধুলাবালু পরিষ্কার না করেই পিচ ও বিটুমিন ঢালছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার কুয়াকাটার নবীনপুরে সমকাল

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৩০

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় একটি সড়ক সংস্কারে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর এসব দাবির সত্যতাও পাওয়া গেছে সরেজমিন। যদিও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
কুয়াকাটা পৌরসভা সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (এলজিসিআরআরপি) আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পৌরসভার বেশ কিছু কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ২৪০ মিটার সড়ক সংস্কারসহ চারটি স্কিমে কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গাজী কনস্ট্রাকশন। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ৬৯ লাখ ৪ হাজার ৫৮৫ টাকা। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শুরু করে তারা, যা আগামী ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা।
ওই সড়ক সংস্কারকাজের মধ্যে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কুয়াকাটা হোটেল রোজভ্যালি (বর্তমান নিউ সিকদার প্যালেস) থেকে ফকিরবাড়ি পর্যন্ত ১ হাজার ৪৫০ মিটার কার্পেটিং কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তাদের ভাষ্য, এখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরোনো ইট ব্যবহার করছে। এ ছাড়া ধুলাবালু ঠিকমতো পরিষ্কার না করেই বিটুমিনের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি দরপত্রে ১২-১৫ মিলিমিটার কার্পেটিংয়ের কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ওই সড়কে অর্ধেকেরও কম পুরুত্বের কার্পেটিং করছে। ঠিক সময়ে কাজ শুরু না করে তারা শেষ সময়ে এসে তড়িঘড়ি শুরু করেছে।
মঙ্গলবার ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তা সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। তবে সংস্কারকাজে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। রাস্তার পাশের পুরোনো ইট দিয়েই চলছে মেরামত কাজ। এর ওপরই বিটুমিনের প্রলেপ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। তাদের ধুলাবালুও পরিষ্কার করতে দেখা যায়নি।
নবীনপুরের বাসিন্দা মো. হাসান আল-আউয়াল বলেন, এই রাস্তাটি সংস্কারে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। এতদিন কেউ খোঁজ নেয়নি। হঠাৎ শনিবার থেকে কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। এখন কোনোমতে কাজ শেষ করছে। বালুর মধ্যেই বিটুমিন দিচ্ছে। এভাবে কাজ চললে সামান্য বৃষ্টিতেও সড়কটির অবস্থা আগের থেকেও খারাপ হয়ে যাবে।
একই এলাকার মো. মুছার ভাষ্য, অতীতেও তাদের কথার দাম ছিল না। এখনও নেই। ঠিকাদারের লোকজন নিজেদের মনমতো কাজ করে যাচ্ছে। কাজটি শুরুর দিকে তারা যেভাবে আশা করেছিলেন, এখন তার উল্টো হচ্ছে। আধা ইঞ্চি পিচ দেওয়ার কথা শুনেছিলেন। এখন অর্ধেকেরও কম দেওয়া হচ্ছে। ফলে এই সড়ক বেশিদিন টিকবে বলেও মনে হচ্ছে না তাঁর।
এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী কনস্ট্র্রাকশনের পরিচালক মো. ফেরদাউস গাজী শুরুতে কথাই বলতে চাননি। পরে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, সঠিক কাজই হচ্ছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১০ মিলির কম পিচ দেখা গেলেও কোথাও কম-বেশি আছে।
তবে এ সড়কর কাজে পিচ কোথাও কম কোথাও বেশি দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান কুয়াকাটা পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সুজন। তাঁর ভাষ্য, পৌরসভার কার্যসহকারী সার্বক্ষণিক কাজের তদারক করছেন। তারা কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাননি। তবে নিয়মের বাইরে কাজ হলে বিল বন্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কৌশিক আহম্মেদও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘কাজ শেষ হলে আমাদের প্রকৌশলীরা গিয়ে দেখবেন। পরিপূর্ণভাবে কাজ না হলে তাঁকে (ঠিকাদার) কোনো বিল দেওয়া হবে না।’

আরও পড়ুন

×