শূন্য ২২৩৬ আসনের বিপরীতে আবেদন লক্ষাধিক

.
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৫৩
সন্তানকে ভর্তির জন্য চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে অনেক অভিভাবকেরই পছন্দের শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানে পড়ার প্রবল ইচ্ছা কিশোর তাজওয়াদ ইসলাম শিমুলের। ছেলের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই তাকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করতে সম্প্রতি অনলাইনে আবেদন করেছে শিমুলের বাবা-মা। যদিও তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে ভর্তির সেই কাঙ্ক্ষিত সুযোগ মিলবে কিনা, তা নিয়ে এখন চিন্তার শেষ নেই তাদের। কারণ স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে মাত্র ২১৬ জনের। এর বিপরীতে ভর্তির আবেদন জমা পড়েছে রেকর্ড ২০ হাজার ২৫৯টি। এ হিসাবে প্রতি আসনের জন্য আবেদন জমা পড়েছে সর্বোচ্চ ৯৪টি।
সন্তানকে একটি ভালো সরকারি স্কুলে ভর্তি নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তা শুধু এখন শিমুল বা তার মা-বাবারই নয়; আরও অনেকের। কারণ চট্টগ্রাম নগরীর ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২ হাজার ২৩৬টি শূন্য আসনের বিপরীতে এবার ভর্তি হতে আবেদন করেছে রেকর্ড ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৬ জন। এ হিসাবে প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৬২টি। ফলে পছন্দের স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যে এবার অনেকের জন্য সোনার হরিণ হয়ে উঠবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর ১০টি সরকারি স্কুলের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ১ হাজার ৪৬৪ আসনের বিপরীতে এবার আবেদন পড়েছে ৮০ হাজার ১২৮টি। অর্থাৎ প্রতি আসনের বিপরীতে ৫৫টি আবেদন পড়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৪৫৮টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৪৩ হাজার ৬০৭টি, যা প্রতি আসনের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৯৫টি। নবম শ্রেণিতে ২৯৩ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ১৩ হাজার ৪১৯টি।
নগরীর আরেক স্বনামধন্য স্কুল সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোরশেদুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় এ বিদ্যালয়কেই বেশির ভাগ অভিভাবক বেছে নেন। স্কুলের চারপাশের এলাকাগুলোর পাশাপাশি দূরের এলাকার শিক্ষার্থীরাও এখানে ভর্তি হতে আসে। এবার আমাদের বিদ্যালয়ে ৩২৬টি শূন্য আসনের বিপরীতে রেকর্ড ২২ হাজার ৭৬৩টি আবেদন জমা পড়েছে। আসনের তুলনায় আবেদন বহুগুণ বেশি হওয়ায় ভর্তির সুযোগ পাবে না অনেকেই। এতে আমাদের কিছুই করার নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সরকারি স্কুলে আসন বাড়ছে না। একটি আসনের বিপরীতে ৬২ জনের আবেদন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে এ প্রবল সমস্যাকে।
মাউশি উপপরিচালক (মাধ্যমিক) ও ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব আজিজ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের ১০টি সরকারি বিদ্যালয়ে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য অনলাইনে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৬টি আবেদন জমা পড়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শূন্য আসন রয়েছে ২ হাজার ২৩৬টি। ১২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ডিজিটাল লটারি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর প্রকাশ করা হবে ফল।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শরীফ উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় নির্ধারণ করা হবে। লটারির বাইরে কোনো
শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। এর বড় কারণ আসন স্বল্পতা। আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত। আমরা আসন স্বল্পতার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানাব। আমরাও চাই বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাক।
- বিষয় :
- স্কুলে ভর্তি