ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

বালুর কারবারে স্লুইসগেটে ঝুঁকি

বালুর কারবারে স্লুইসগেটে ঝুঁকি

ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:০১

বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে লক্ষ্মীপুরে মজুচৌধুরীরহাটে অবস্থিত স্লুইসগেটটি। প্রায় পাঁচ দশকের পুরোনো এ স্লুইসগেটের একাংশের সীমানা দেয়ালের রেলিং ইতোমধ্যে বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ভেঙে গেছে। মাসখানেক ধরে ওই এলাকায় বালু আনলোড করার যন্ত্র বসানোর পর স্লুইসগেটটি ধসের ঝুঁকিতে পড়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ ছাড়া এর ওপর দিয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধ ও মজুচৌধুরীরহাট-মতিরহাট সড়ক দিয়ে নেওয়া হয়েছে ড্রেজারের পাইপ। ফলে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় লোকজনকে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণীমোহন ইউনিয়নে পড়েছে এই স্লুইসগেটটি। এ জেলা আগে ছিল বৃহত্তর নোয়াখালীর অংশ। নোয়াখালী ও কুমিল্লার পানি দ্রুত নামার সুবিধার্থে ১৯৭৫ সালে মেঘনার মুখে রহমতখালী খালের মুখে নির্মাণ করা হয় মজুচৌধুরীরহাট স্লুইসগেট। কয়েক দশক ধরে এটি বন্যা ও বর্ষার পানি নিষ্কাশনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উপকৃত হচ্ছে এলাকার হাজারো মানুষ। এ ছাড়া কৃষকরাও খালের পানি জমিতে ব্যবহার করতে পারছেন।
শনি ও রোববার ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে। তারা জানান, ৫০ মিটার করে সেখানে দুটি স্লুইসগেট স্থাপন করা হয়েছিল। ৩০ মিটার করে গাইডওয়াল আছে আটটি স্থানে। ইতোমধ্যে একটি গাইডওয়ালের রেলিং বালুবাহী বাল্কহেডের ধাক্কায় ভেঙে গেছে। বাকিগুলোতেও প্রতিনিয়ত বাল্কহেড এসে ধাক্কা খায়। একই কারণে স্লুইসগেটের মূল খুঁটির কয়েকটি জায়গায় গর্ত ও ফাটল ধরেছে।
এর জন্য স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ীকে দায়ী করেন এলাকাবাসী। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. ইমতিয়াজ ও বাদশা মিয়া নামের দুই ব্যক্তি। অনুসন্ধানে জানা যায়, দিনে-রাতে বালুবাহী বাল্কহেড এসে স্লুইসগেটের সীমানা দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে। সেখানে রাখা বালু আনলোডের যন্ত্র থেকে পাইপ সড়কের ওপারে নিতে কাটা হয়েছে বেড়িবাঁধও। বালু সরবরাহের সময় আনলোড যন্ত্রের কম্পনে স্লুইসগেটের দুই পাশের মাটি সরে যাচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে সীমানা দেয়ালও। আগামী বর্ষায়ই পুরো স্লুইসগেট ধসে যেতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন।
চর রমণীমোহন গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জয়নাল আবদিন ব্যাপারী বলেন, স্লুইসগেইটি এই এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ, কিন্তু বালু ব্যবসায়ীদের কারণে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এতে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরবাসীর দুঃখ বাড়বে।
একই গ্রামের বাসিন্দা রাসেলের ভাষ্য, বালু ব্যবসায়ীরা এখানে অবৈধভাবে মাসখানেক আগে কারবার শুরু করেছেন। তাদের বাল্কহেডের ধাক্কায় স্লুইসগেট ও সীমানা দেয়ালের ক্ষতি হচ্ছে। একটি রেলিং কয়েকদিন আগে ভেঙে যায়। প্রশাসনের অসহযোগিতায় সেটিও নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী বর্ষায় স্লুইসগেট ধসে যেতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা জানালেন পল্লিচিকিৎসক মো. মিলন মিয়া। তিনি বলেন, এই স্লুইসগেটের ওপর দিয়ে বেড়িবাঁধ ও মজুচৌধুরীরহাট-মতিরহাট সড়ক গেছে। ১৫ বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এখন বালু ব্যবসায়ীরা স্লুইসগেটের পাশে সড়ক কেটে পাইপ দিয়ে বালু সরবরাহ করছে। বালু আনলোডের সময় মেশিনের কম্পন ও বালুভর্তি বাল্কহেডের ধাক্কায় স্লুইসগেটটি কাঁপতে থাকে।
স্লুইসগেটের ক্ষতি হলে বর্ষা-বন্যায় এলাকাবাসীর জমিজমা-ঘরবাড়ি তলিয়ে যেতে পারে– এমন কথা বলেন চর রমণীমোহন ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হয় বালু ব্যবসায়ী মো. ইমতিয়াজের সঙ্গে। তিনি এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করেন। ইমতিয়াজ বলেন, এখন আর বালু নিয়ে বাল্কহেড সীমানা দেয়ালে ভিড়ছে না। রাস্তা কেটে নেওয়া পাইপ ১৫ দিনের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হবে। ওই সময় স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে নিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সদরের ইউএনও হিসেবে যোগ দেওয়া জামশেদ আলম রানা বলেন, বিষয়টি জেনেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, মজুচৌধুরীরহাট স্লুইসগেট-সংলগ্ন এলাকায় রাস্তা কেটে পাইপ দিয়ে বালু সরবরাহের বিষয়টি শুনেছি। এ ছাড়া সেখানে বালুভর্তি বাল্কহেডও ভেড়ানো হয়। এসব সরাতে ব্যবসায়ীদের ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

আরও পড়ুন

×