নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করায় ছাত্রীকে মারধর-শ্লীলতাহানির অভিযোগ
মালিকসহ তিনজন গ্রেপ্তার

রাজশাহীতে গভীর রাতে মিছিল নিয়ে থানায় যান ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬:৩০ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬:৩৫
রাজশাহীর একটি ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবার দেওয়ার প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা রোববার গভীর রাতে ছাত্রীনিবাস থেকে বের হয়ে মিছিল নিয়ে থানায় যান। মিছিল থেকে তারা মেস মালিকের বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। পরে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- ছাত্রীনিবাসের মালিক আবদুল মতিন (৬০) এবং তাঁর দুই ছেলে রাব্বুল হাসান পলক (২৪) ও ইয়াসিউল হাসান ঝলক (২২)। রাতে থানায় গিয়ে ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ছাত্রীনিবাসের মালিকসহ চারজনের নামে দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
জানা গেছে, নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত এই ছাত্রীনিবাসটির নাম ‘ঝলক-পলক মেস’। প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর অবস্থিত এই ছাত্রীনিবাসটিতে দুই শতাধিক ছাত্রী ভাড়া থাকেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। এর জের ধরেই ঘটনার সূত্রপাত। পরে দিনভর ছাত্রীনিবাসে ছাত্রদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রীরা মামলা করতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বোয়ালিয়া থানার দিকে রওনা দেন। তখন ছাত্রীরা জানান, তাদের বেশিরভাগ ছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতির জন্য এই ছাত্রীনিবাসে আছেন। এই ছাত্রীনিবাসে টাকা বেশি নেওয়া হলেও খাবারের মান খুবই খারাপ। রোববার সকালে নিম্নমানের খিচুড়ি পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। তিনি এই ছাত্রীনিবাসে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ সময় মালিকপক্ষ ওই ছাত্রীকে জানায়, ছাত্রীনিবাসে ওঠার সময় তিনি যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সেখানে লেখা আছে যে ৭ মাসের আগে ছাত্রীনিবাস ছাড়া যাবে না। ওই ছাত্রী চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে মালিক জানান, আইনজীবী ছাড়া এটা দেখানো যাবে না। নিজের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র দেখতে আইনজীবী লাগবে কেন, এমন প্রশ্ন তুললে ছাত্রীনিবাসের মালিক তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। এ অবস্থায় মালিকের দুই ছেলে ঝলক ও পলক এসে ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এতে অন্য ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঝলক ও পলক তার বন্ধুদের ডেকে এনে ছাত্রীদের হুমকি দেন যে, তারা তাদের রাজশাহীতেই থাকতে দেবেন না।
সোমবার দুপুরে ছাত্রীনিবাসটিতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের সকালের খাবার রান্না হয়নি। দুপুরের খাবারের জন্য রান্নার প্রস্তুতি চলছিল। ছাত্রীনিবাসে মালিকপক্ষের কেউ ছিলেন না। ছাত্রীদের অভিযোগ, রোববার সকালের ওই ঘটনার পর মালিকপক্ষ দিনভর তাদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের বলা হয়, রাতে ফটকের তালা খুলে দেওয়া হবে। তখন সবাইকে একযোগে ছাত্রীনিবাস ছাড়তে হবে। তখন ছাত্রীরা ফোন করে তাদের বন্ধুদের সহযোগিতা চান। এরপর রাত ১১টার দিকে ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী গিয়ে ছাত্রীনিবাসের তালা ভেঙে ছাত্রীদের বের করেন। খবর পেয়ে সেখানে যান নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ। তিনি ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। এ সময় তিনি মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থানায় যেতে বলেন। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করার পর রাত ২টার দিকে তারা থানা থেকে বের হন।
থানার ওসি বলেন, ‘আমি খবর পেয়েই সেখানে গিয়ে দুজনকে আটক করি। তাদের নিয়ে আসার সময় ছাত্রীদের বলি মামলা করার জন্য যেন তারা চলে আসেন। তারা যখন আসছিলেন, তখন অভিযান চালিয়ে আরও একজনকে আটক করা হয়। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
ওসি জানান, সোমবার গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ে আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়ে। তাদেরও শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রীনিবাসটিতে মালিক ও মালিকেরা ছেলেরা এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন, শ্লীলতাহানি করেছেন। খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে যায় এবং তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। রাজশাহীতে অনেক মেস। এটা আমাদের মাথাতেই আসেনি যে, স্টুডেন্টরাও এ রকম হুমকির মুখে থাকে। এটা এখন আমাদের নজরের মধ্যে এসেছে। আমরা সজাগ থাকব। কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হলে ৯৯৯ বা থানায় ফোন করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।’
- বিষয় :
- রাজশাহী
- যৌন নিপীড়ন
- গ্রেপ্তার