ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সময় ছিঁড়ল সাবমেরিন ক্যাবল

আড়াই মাস ধরে অন্ধকারে দেড় হাজার পরিবার

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সময় ছিঁড়ল সাবমেরিন ক্যাবল

ছবি: সমকাল

ফরিদপুর অফিস

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩:১১ | আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩:১২

ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন। এতে চরম দুর্ভোগে দিন পার করছে ইউনিয়নটির প্রায় দেড় হাজার পরিবার। 

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ইউনিয়নটির চারপাশে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিবছর নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে শত শত পরিবার।

জানা গেছে, প্রায় ২ মাস আগে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সময় সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে ফেলে। তারপর থেকে ওই ইউনিয়ন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নবাসী দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান ও বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রুখতে সংবাদ সম্মেলন করলেও লাভ হয়নি।

ইউনিয়নের মজিদ মুন্সির কান্দি গ্রামের মোশাররফ মোল্লা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে ২-৩টি ড্রেজার রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে পদ্মা নদীর এই ইউনিয়ন সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তোলন করে। গত সরকারের আমলে তারা কাউকে তোয়াক্কা করতো না। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়ে ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউনিয়নে বিদ্যুৎ নেই। আমরা এর আগে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেও তাদের থামাতে পারিনি। প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়নি।

কাদের সরকাকান্দি গ্রামের মিজান সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে নাসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পদ্মায় ড্রেজার ব্যবসা চালায় তার সহযোগী একই ইউনিয়নের বাসিন্দা আয়নাল ফকির, সিরাজ জংগী, লিটু সরদার, জুয়েল সরদার ও শামিম ফকিরসহ কয়েকজন। 

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর নদীভাঙনের কবলে পড়ে কৃষিজমি, ঘর-বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

আলেপ সরদারের কান্দি গ্রামের শাহিন হাওলাদার জানান, রাতের বেলা ইউনিয়নটির চারপাশে চেয়ারম্যানের লোকজন ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে। বালু উত্তোলনের সময়ই সাবমেরিন ক্যাবল ছিঁড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের অন্ধকারে দিন পার করতে হচ্ছে। আমরা দ্রুত সাবমেরিন ক্যাবল মেরামত করে পুনরায় সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

ইউনিয়নের দশম শ্রেণির ছাত্রী লিমা আক্তার বলেন, অন্ধকারের মধ্যে স্কুলের পরীক্ষাগুলো দিয়েছি। বাসায় বিদ্যুৎ নেই, স্কুলেও বিদ্যুৎ নেই। রাতে এখন আর পড়ালেখা করা হয় না। সামনেই এসএসসি পরীক্ষা। ক্ষমতাবানরা জনগণের স্বার্থ থেকে নিজেদের স্বার্থকে বড় মনে করে।

নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন মুঠোফোনে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর আমার কোনও লোক নদীতে ড্রেজার চালায়নি। কে বা কারা ড্রেজার চালিয়েছে আমি জানি না।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নে বিদ্যুৎ নেই। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য চেষ্টা করছেন।

ঢাকার দোহার উপজেলার নারিশা ইউনিয়ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আব্দুর রাশিদ বলেন, সাবমেরিন ক্যাবল কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নিরূপণের চেষ্টা চলছে। নদীতে পানি বেশি থাকায় আমরা কয়েকদফা চেষ্টা করেও সাবমেরিন ক্যাবল মেরামত করতে পারিনি। পানি না কমা পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংযোগ মেরামত করতে আরও ২ মাসের মত সময় লাগতে পারে।

সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন

×