তীব্র শীতে ‘প্রাণহীন’ পাঁচ শতাধিক পশুপাখি
সরেজমিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

ফাইল ছবি
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩:৫০ | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ০০:১৯
পৌষের মাঝামাঝিতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে প্রকৃতিতে বইছে হিমেল হাওয়া। জেঁকে বসেছে শীত। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও মিলছে না সূর্যের দেখা। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ায় স্থবির জনজীবন। পৌষের এই ঠান্ডায় ‘জবুথবু’ খাঁচাবন্দি পশুপাখিও। এতে চরম কষ্টে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ৬৮ প্রজাতির সাড়ে ৫ শতাধিক পশুপাখির দিনরাত কাটছে প্রাণহীনভাবে। বাঘ-সিংহের হুঙ্কার দেওয়াসহ, আগের চেয়ে কমে গেছে একে অপরের সঙ্গে খুনসুটি, চিৎকার-চেঁচামেচিও। সরেজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এই অবস্থায় প্রাণীদের কিছুটা উষ্ণতা দিতে খাঁচার ভেতরে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি খড় ও চটের বস্তা। স্বাস্থ্যগত সমস্যা তদারকিতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারিও। আগুন জ্বালিয়েও ঠান্ডা দূর করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
স্বাভাবিক সময়ে চিড়িয়াখানার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে থাকা খাঁচায় বাঘ ও সিংহকে ‘রাজার’ মতোই ঘুরে ঘুরে হুঙ্কার দিতে দেখা যেত। পানির চৌবাচ্চায় বেশির ভাগ সময় মাথাসহ পুরো শরীর ভিজিয়ে শুয়ে, বসে ও পায়চারি করত বাঘ করোনা, জয়া, জো বাইডেন, প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী, রূপসীরা। তবে এই শীতে বেশির ভাগ সময় খাঁচার এক কোণে বসে থাকছে বাঘ ও সিংহ। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীরা প্রিয় বাঘ ও সিংহের সঙ্গে ছবি তুলতে ও এক পলক দেখতে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও মিলছে না দেখা। এদের বাঁ পাশে থাকা বানরের অবস্থা আরও নাজুক। ঠান্ডায় একেবারে ‘জবুথবু’ হয়ে পড়েছে বানরগুলো। তীব্র ঠান্ডা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে একে অপরের সঙ্গে গা-ঘেঁষে বসে ও জড়িয়ে থাকছে। পানি যার সবচেয়ে পছন্দের, সেই কুমিরকেও দেখা গেছে একপাশে উঠে শুয়ে থাকতে। একই অবস্থা জলহস্তীরও। শীতে কাতর পশু-প্রাণীরা রোদ পোহাতে শুয়ে-বসে থাকছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ সমকালকে বলেন, মানুষই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে নানা কৌশল নিচ্ছে। এমন ঠান্ডা ও হিমেল বাতাসে খাঁচাবন্দি পশু-প্রাণীরাও ভালো নেই। তাদের বাড়তি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঠান্ডা থেকে তাদের রক্ষা করতে খাঁচার ভেতর বাড়তি খড় ও চটের বস্তা দেওয়া হচ্ছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে। এমন তীব্রতা আরও চার থেকে পাঁচ দিন থাকবে।
দুই সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসা চট্টগ্রাম নগরের কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা জুলফিকার আলী বলেন, পরীক্ষায় ভালো ফল করায় দুই ছেলে
বায়না ধরেছে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে, তাই এলাম। তবে মানুষের মতো শীত ও তীব্র ঠান্ডায়
কাবু হয়ে গেছে বনের রাজা সিংহ-বাঘসহ বেশির ভাগ পশুপাখি। পশু-প্রাণীর প্রাণহীন অবস্থা দেখে হতাশ সন্তানরা।
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই চট্টগ্রামে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে, যা অব্যাহত ছিল গতকাল বৃহস্পতিবারও। এদিন সকাল থেকেই ছিল হিমেল হাওয়া। দুপুরের পর দেখা মেলে সূর্যের।
- বিষয় :
- পশু