ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

‘আরাকান আর্মির প্রতিবন্ধকতায়’ টেকনাফ স্থলবন্দরে বাণিজ্য ভাটা  

‘আরাকান আর্মির প্রতিবন্ধকতায়’ টেকনাফ স্থলবন্দরে বাণিজ্য ভাটা  

ফাঁকা বন্দরের ঘাট। ছবি-সমকাল

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯:৩০

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের ভাব পড়েছে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যে। টেকনাফ স্থলবন্দরে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। সীমান্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে ভাটা। গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্যেবাহী ট্রলার আসেনি। মূলত জলপথে ‘আরাকান আর্মির’ প্রতিবন্ধকতায় স্থলবন্দরে পণ্যবাহী ট্রলার আসছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

স্থলবন্দরের কাস্টমস সূত্রের মতে, সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে ৩ ডিসেম্বর পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল। টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখলের পরে মূলত এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসেনি।  তবে আমাদের সরকার সে দেশের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। খুব শীঘ্রই ভালো ফল আসবে। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে টেকনাফ বন্দরে মাসে অন্তত ২০০ ইঞ্জিনচালিত বড় বোটে পণ্য আনা-নেওয়া হতো। গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে টেকনাফ বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ রয়েছে। ডিসেম্বরে স্থলবন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় মাত্র ৬ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে আদায় হয় ২০ কোটি টাকা। স্বাভাবিক সময়ে ৪০-৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয় টেকনাফ স্থলবন্দরের মাধ্যমে। এছাড়া স্বাভাবিক সময় বন্দরে দিনে ১৫-২০টি নানা ধরনের ট্রলার ও জাহাজ থাকে।

বন্দরের কাস্টম কর্মকর্তারা জানান, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২৩ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে সরকার ২৫৭ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। গেল (২০২৪-২৫) অর্থ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার মেট্রিক টন আমদানি হয়। যার ফলে সরকার ৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের তুলনায় ১৭০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। অন্যদিকে গত দুই অর্থ বছরে যেসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিমেন্ট। গত ২৩-২৪ অর্থ বছরের সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে ২৩৬ মেট্রিক টন। যার মূল্য ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার অধিক। এছাড়া চলতি ২৪-২৫ অর্থ বছরে ২৯১ মেট্রিক টন সিমেন্ট রপ্তানি হয়েছে। যার মূল্য ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।      

এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা এম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মি দখলের পরে মূলত এ বন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ আসেনি। কারণ তাঁরা (আরাকান আর্মি) প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সেজন্য পণ্যে জাহাজ আসতে পারছে না। তবে সরকার সে দেশের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে, যাতে সীমান্তের বাণিজ্যে স্বাভাবিক থাকে।’

সরেজমিনে সোমবার টেকনাফ সদরের কেরুনতলী এলাকায় স্থলবন্দরে কোনো মানুষের দেখা মেলেনি। জেটিঘাটগুলো ফাকা দেখা গেছে। এসময় স্থলবন্দরে কথা হয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাখাইনে যুদ্ধের কারণে অনেক দিন ধরে ব্যবসা বন্ধ আছে। এতে আমাদের অনেক লোকজন কর্মহীন দিন কাটছে।’

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘মালামালের জন্য আমাদের অগ্রিম টাকা সেদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধের কারণে মালামাল আসতে পারছে না। এতে আমার মতো অনেক ব্যবসায়ীদের লোকসানে পরতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ বন্দরের মহাব্যবস্থাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমার থেকে কোনো পণ্যবাহী জাহাজ আসেনি। মূলত রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ার পর কোনো পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আসেনি। তবে সিমেন্টসহ কিছু পণ্য বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে যাচ্ছে।’

এদিকে সম্প্রতি সীমান্ত পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে আর দেশটি চালাচ্ছে জান্তা সরকার। তাই দুই পক্ষের সাথেই যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। আমাদের স্বার্থ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রথম থেকে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি।

আরও পড়ুন

×