ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সিসি ব্লক তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ, তদারকি নেই

সিসি ব্লক তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ, তদারকি নেই

কপোতাক্ষ নদের তীর সংরক্ষণের জন্য কয়রা উপজেলার পদ্মপুকুর এলাকায় সিসি ব্লক তৈরি করছেন শ্রমিকরা সমকাল

শেখ হারুন অর রশিদ, কয়রা (খুলনা)

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২২:৩৬

নদীতীর সংরক্ষণ কাজে ব্যবহারের জন্য সিসি ব্লক তৈরি করতে ঢালাই যন্ত্রে উপকরণ মেশাচ্ছিলেন শ্রমিকরা। নিয়ম অনুযায়ী ১:৩:৫ অনুপাতে সিমেন্ট, বালু ও পাথর মেশানোর কথা। তবে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের ভাষ্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় শ্রমিকরা তাদের ইচ্ছেমতো উপকরণ মেশাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকেও পাওয়া যায়নি। এভাবে চললে নদীতীরের বাঁধ স্থায়ী হবে না বলে শঙ্কা এলাকার মানুষের।
খুলনার কয়রা উপজেলার পদ্মপুকুর এলাকায় এভাবে চলছে কাজ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কপোতাক্ষ নদের তীর সংরক্ষণের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সাতক্ষীরা-২ বিভাগ। তদারকি না থাকায় সিসি ব্লক তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় নদীর চিকন দানার বালু ও নিম্নমানের পাথর। বালু, পাথর ও সিমেন্টের অনুপাতও মানা হচ্ছে না। সেই সঙ্গে কাজের অগ্রগতি নিয়ে গড়িমসি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সিসি ব্লক ডাম্পিংয়ের সময় পাউবোর কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যায় না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল। তাঁর ভাষ্য, ব্লক তৈরির ক্ষেত্রে নয়ছয় চলছে। এক বালতি সিমেন্টের সঙ্গে তিন বালতি বালু ও ১০ বালতি পাথরের কুঁচি ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা এক বালতি সিমেন্টের সঙ্গে ছয়-সাত বালতি বালু ও ১২-১৩ ঝুড়ি পাথরের কুঁচি মেশাচ্ছেন। এভাবে তৈরি হলে ব্লকের স্থায়িত্ব কমে যায়। এ কাজে নজরদারির দাবি জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৭ কোটি ১৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় ৪৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজটি করছে এসএস-ন্যাশানটেক (জেভি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর শুরু হওয়া এ কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর। এরপর কাজের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করলেও তা অনুমোদন পায়নি।
গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কাজ তদারকির দায়িত্বে ছিলেন পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মমিন। তিনি জানান, কপোতাক্ষ নদের পূর্ব পাশে ৪৮০ মিটার তীর সংরক্ষণের জন্য ২ লাখ ১১ হাজারের মতো সিসি ব্লক তৈরি করে তা ‘ডাম্পিং’ ও ‘প্লেসিং’ করা হবে। এর মধ্যে ৭১ হাজারের মতো ব্লক ডাম্পিং করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর। এখন কাজ তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল আলিম। তাঁর ভাষ্য, পরবর্তী সময়ে আরও ৫৫ হাজার সিসি ব্লক নদে ডাম্পিং করা হয়েছে।
এলাকাটি দুর্যোগ ঝুঁকিপ্রবণ হওয়ায় যথাসময়ে কাজ শেষ করা জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য তন্ময় সরকার। তিনি বলেন, কাজের মান ভালো হওয়া দরকার। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব ক্ষেত্রেই ফেল করেছে। কাজের মান তো ভালো করছেই না, আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেন তিনি।
যদিও ব্লক তৈরির সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন দাবি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস ন্যাশানটেকের ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন বলেন, বিভিন্ন ‘সাইট’ পরিদর্শনের কারণে মাঝেমধ্যে তদারকি কর্মকর্তারা আসতে দেরি করেন। তবে ফোনে সব কিছু তদারকি করেন তারা।
পাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, কাজের সাইটে সার্বক্ষণিক কার্যসহকারী থাকেন। টাস্কফোর্সও পরিদর্শন করেন। মান যাচাই শেষে ব্লক ডাম্পিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়। এর পরও কোনো অভিযোগ থাকলে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।

আরও পড়ুন

×