চাহিদা ১৪ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ আড়াই হাজার
তিস্তা ব্যারাজে সেচ কার্যক্রম

ফাইল ছবি
স্বপন চৌধুরী, রংপুর
প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:০১
দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ১৪ হাজারের বিপরীতে পানিপ্রবাহ রয়েছে মাত্র আড়াই হাজার কিউসেক। ভয়াবহ পানি সংকটের শঙ্কা নিয়েই এ ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রংপুর ও দিনাজপুর প্রধান সেচ খালে পানি ছাড়া হয় গত ১৫ জানুয়ারি। সেচ কার্যক্রম চালু রাখতে বন্ধ রাখা হয়েছে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট। এতে গেটের ভাটিতে নদী প্রায় পনিশূন্য হয়ে পড়েছে। যদিও গত বছর সেচ কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে পানিপ্রবাহ ছিল চার হাজার কেউসেকের বেশি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারও তিস্তার পানি দিয়ে শতভাগ সেচ দেওয়া সম্ভব হবে না। অনেক জমিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের সেচ দিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় গত বছর ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়। চলতি বোরো মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১২ উপজেলায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তিস্তায় পানি সংকটসহ নানা জটিলতার কারণে ২০১৪ সালে তিন জেলায় মাত্র ৮ হাজার হেক্টর, ২০১৫ ও ’১৬ সালে ১০ হাজার হেক্টর, ২০১৭ সালে ৮ হাজার হেক্টর, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর, ২০১৯ ও ’২০ সালে ৪০ হাজার হেক্টর, ২০২১ সালে ৫৩ হাজার হেক্টর, ২০২২ ও ’২৩ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়।
সরেজমিন তিস্তা সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেচ খালে পানি সরবরাহ শুরু হওয়ায় কৃষকরা বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ জমি কাদা করছেন; কেউবা রোপণ করছেন ধানের চারা। কৃষকরা জানান, জমি তৈরি থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রতি একর জমিতে সেচ খরচ দিতে হয় ৪৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় খরচ পড়ে মাত্র ১৬০ টাকা। সেখানে নিজস্ব কিংবা ভাড়ায় সেচযন্ত্র ব্যবহার করলে বিঘাপ্রতি সেচ খরচ গুনতে হয় কমপক্ষে আড়াই হাজার টাকা। সে কারণে বোরো চাষে প্রকল্পের সেচ খালে পানি আসার অপেক্ষায় থাকেন তারা। কিন্তু মৌসুমের কোনো কোনো সময় ঠিকমতো পানি মেলে না।
নীলফামারীর জলঢাকার দুন্দিবাড়ি এলাকার কৃষক আব্দুস সবুর বলেন, তিস্তায় পানি সংকটের ফলে কখনও কখনও সেচ খালে পানি থাকে না। ফসল রক্ষায় তখন জমিতে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি দিতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় জানান, প্রকল্প এলাকায় সেচ দেওয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে ব্যারাজ পয়েন্টে স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক। কিন্তু তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। এ কারণে সব স্লুইসগেট বন্ধ করে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে ব্যারাজের ভাটিতে তিস্তায় আর প্রবাহ থাকছে না। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের একচেটিয়া পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানি ক্রমাগত কমে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-রংপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ৩০ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রয়েছে আড়াই হাজার কিউসেক। এর থেকে আরও কমলে সেচের পানি সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটবে।
- বিষয় :
- তিস্তা