ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাকিবুল

তাঁত শ্রমিক মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে বাঁধা দারিদ্র্য

মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাকিবুল

মা আমেনা খাতুনের সঙ্গে রাকিবুল। ছবি: সমকাল

জালাল উদ্দিন, সাঁথিয়া (পাবনা)

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৮:১৮

তাঁত শ্রমিক রাজা মোল্লা ও আমেনা খাতুন দম্পতির তিন সন্তান। তাদের মধ্যে বড় ছেলে রাকিবুল ইসলাম এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। পরীক্ষার ফলাফলে মেধাতালিকায় ৪ হাজার ২৫৭তম হয়ে সুযোগ এসেছে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে পড়ার। কিন্তু সেখানে ভর্তি ও পড়াশোনার সার্বিক খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের নাড়িয়াগদাই গ্রামে রাকিবুলের বাড়ি। তার ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণি এবং বোন দশম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের মা-বাবা দু’জনেই তাঁত শ্রমিকের কাজ করেন। সেই কাজের আয় এবং ধারদেনা করে সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছেন তারা। রাকিবুল নিজেও তাঁতের কাজ করে মা-বাবাকে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ যুগিয়েছেন তিনি। কিন্তু মেডিকেলে ভর্তি থেকে শুরু করে সেখানে পড়ানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা তাঁর পরিবারের নেই। রাজা মোল্লার কোনো জায়গাজমি নেই। এমনকি বাড়ির ভিটেও নেই। তারা থাকেন নানাবাড়ি। 

রাকিবুল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। অভাব-অনটনের কারণে অনেক দিন স্কুল-কলেজ বাদ দিয়ে তাঁত শ্রমিকের কাজ করেছি। নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে পরিনি। টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি। ভর্তি ফি এবং পরবর্তীতে বইপত্র ও মেডিকেলের সরঞ্জাম কিনতে অনেক টাকা লাগবে। সেটা নিয়ে আমি ও আমার পরিবার চরম দুশ্চিন্তায় আছি। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু। চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্ত এখন পর্যন্ত তার ভর্তির টাকা যোগাড় হয়নি। যত কষ্টই হোক, আমার একটাই স্বপ্ন, ডাক্তার হয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করা। আমি যেন ভবিষ্যতে ভালো চিকিৎসক ও ভালো মানুষ হয়ে জনগণের সেবা করতে পারি, সেজন্য সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’

রাকিবুলের মা আমেনা খাতুন বলেন, ‘আয়ের সব টাকা সন্তানদের পেছনে খরচ করেছি। ছেলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন ছেলের ভর্তির টাকা ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’

রাকিবুলের বাবা রাজা মোল্লা বলেন, ‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই প্রচুর পড়ালেখা করতো। রাকিবুলের পড়ালেখার পেছনে তার মায়ের অবদান বেশি। এ ছাড়া স্কুল থেকে শিক্ষকরা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। আমার স্বপ্ন ছিল ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়ানোর। কিন্ত ছেলের মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ নিয়ে খুব টেনশনে আছি। ছেলেটাকে ডাক্তারি পড়াতে পারলে আমাদের সব কষ্ট সার্থক হতো। জানি না সে স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। মেডিকেলে না কি ভর্তি ও পড়ার খরচ অনেক। এত খরচ কীভাবে জোটাবো?’

রাকিবুলের প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম ও সোবাহান বিশ্বাস বলেন, আমরা দেখেছি ছোটবেলা থেকেই তার পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেশি। রাকিবুলের বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাঁকে পড়ালেখা করাচ্ছে। আজ তাদের কষ্ট সার্থক। এখন সে আমাদের এলাকার গর্ব।’ 

নাড়িয়াগদাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘রাকিবুল আমার বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। প্রকৃত মেধাবীদের দারিদ্রতা কখনও সফলতা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না– সেটা রাকিবুল প্রমাণ করেছে। আমার বিদ্যালয়ে থাকাকালীন যতটা পেরেছি তাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এখনও সহযোগিতা করবো। তার স্বপ্ন পূরণে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।’ 

আরও পড়ুন

×