জমি নিয়ে বিরোধ
রাতের আঁধারে প্রবাসীর বাড়িতে হামলা, হত্যাচেষ্টা

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রাতের আঁধারে আবু বক্কর সিদ্দীক নামে এক প্রবাসীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। ছবি: সমকাল
আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ | ২০:২৭
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে রাতের আঁধারে আবু বক্কর সিদ্দীক নামে এক প্রবাসীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়ন পরিষদের আঠারোখাদা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী বলছেন, রাত হলেই তাকে ও তার পরিবারের লোকদের হত্যার জন্য বাড়ির আশপাশে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে প্রতিপক্ষের লোকজন। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার আলমডাঙ্গা থানায় আটজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
বিবাদীরা হলো– আঠারোখাদা গ্রামের মৃত সুলতানের ছেলে রবিল হোসেন, মো. জয়নাল, বোরহান, জয়নালের স্ত্রী সালেহা খাতুন, মো. আরমান, মো. আকমান, মো. রুকমান, মো. ফারুক।
লিখিত অভিযোগকারী আবু বক্কর সিদ্দীক একই গ্রামের বাদী সোহরাব খন্দকারের বড় ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থেকে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন।
আবু বক্কর অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, ২৩ শতক জমিতে আমার দাদা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আমরা বসবাস করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে বিবাদীরা কিছুদিন ধরে আমাদের জমির মধ্যে তারা কিছু অংশ নিজেদের দাবি করছে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে গত বুধবার রাত দেড়টার দিকে বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবে রাম দা, লোহার রড ও জি আই পাইপ নিয়ে অতর্কিত আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। আমাদের জমিতে নির্মাণাধীন ইটের ঘর ভেঙে ফেলে তারা। এক পর্যায়ে অস্ত্র দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর বুধবার রাত ১০টার দিকে তারা একইভাবে অস্ত্র নিয়ে বাড়ির আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। উচ্চস্বরে আমাদের গালিগালাজ করে এবং হুমকি দিয়ে বলতে থাকে, আবু বক্কর বা তার পরিবারের যাকে যেখানে পাবে, সেখানেই খুন করবে। বিবাদীরা হুমকি, ধমকি দেওয়া চলমান রেখেছে। তারা একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারা যেকোনো সময় সুযোগ পেলেই আমাকে বা আমার পরিবারকে হত্যা করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমরা আতঙ্কে আছি।
এ বিষয়ে আবু বক্করের ছোট ভাই ওসমান গনি বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে কখনো গন্ডগোল বা ফ্যাসাদে জড়াইনি। সব সময় সাধারণভাবে বাঁচতে চেয়েছি। কিন্তু বিবাদীরা আমাদের সঙ্গে অন্যায়ভাবে এমন কেন করছে বুঝতে পারছি না। যে জমিতে আমার বাপ-দাদা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে, সে জমি কীভাবে তারা দাবি করে? বিবাদী রবিল হোসেন সারাকাল আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছে। তার দুই ভাই জামায়াতে ইসলামীর লোক। তারা বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর প্রভাব খাটিয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের দাদার নামে রেকর্ড করা জমি দখলের জন্য প্রতিনিয়ত আমাদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। জমি নিয়ে সমস্যা থাকলে আইনিভাবে সেটার মীমাংসা হবে। কিন্তু তারা তা না করে গায়ের জোর খাটিয়ে, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে, হত্যার হুমকি দিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করছে।’
ওসমান আরও বলেন, ‘দেশ থেকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বিদায় হয়েছে, কিন্তু তাদের সন্ত্রাসী কর্মীরা রয়ে গেছে। তাদের আচরণ বদলায়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিবাদী রবিল হোসেন, মো. জয়নাল ও বোরহান ফোন কল রিসিভ করেননি।
এলাকাবাসী জানান, কয়েক যুগ ধরে আবু বক্কর ও ওসমানের বাবা, দাদারা এই জমিতে বসবাস করে আসছেন। বহু বছর আগে জমিটা রবিলের বাবা সুলতানের কাছ থেকে কিনে নেন আবু বক্করের দাদা। তবে সে সময় তালবাহানা করে জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি সুলতান। বিষয়টা এলাকার সব মুরুব্বি জানেন। আওয়ামী লীগের কর্মী রবিল গায়ের জোর দেখিয়ে জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। আমরা এলাকাবাসী এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়াদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তবারক হোসেন সমকালকে বলেন, আবু বক্করদের প্রতিপক্ষ মৃত সুলতানের উত্তরসূরিদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। কিন্তু তারা এলাকার প্রায় ১০০ শতক জমি নিয়ে প্রায়ই মানুষের সঙ্গে অযথা বিরোধ সৃষ্টি করে। আবু বক্কর ও তার পরিবার দীর্ঘদিন জমি ভোগদখল করে আসছেন। মৃত সুলতানের উত্তরসূরিরা সেটা নিজেদের জমি দাবি করে আদালতে মামলা করেছে। এ নিয়ে আগামী রোববার ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক হবে।
আলমডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (ওসি) মাসুদুর রহমান জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধে উভয় পক্ষের আদালতে মামলা রয়েছে। তবে বুধবার রাতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- চুয়াডাঙ্গা
- হামলা
- হত্যাচেষ্টা
- মামলা
- জমি নিয়ে বিরোধ