ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বিদ্বেষমুক্ত জীবনের প্রার্থনা আখেরি মোনাজাতে

বিদ্বেষমুক্ত জীবনের প্রার্থনা আখেরি  মোনাজাতে

গাজীপুরের তুরাগতীরে রোববার তাবলিগের মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের প্রথম ধাপের ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে মাঠের বাইরে থেকেও অংশ নেন হাজারো মুসল্লি। টঙ্গী এলাকা থেকে তোলা -সমকাল

 গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:২৮

‘হে আল্লাহ, আমাদের জিন্দেগির সব গোনাহ মাফ করে দিন। মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বরকতময় করে দিন। আমাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত গোনাহ। তওবা করছি, আমাদের মাফ করে দিন। হে আল্লাহ, হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত জীবন দান করুন। ইমানি গুণাবলি আমাদের দিলের মধ্যে দিয়ে দিন।’ তাবলিগের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা হাফেজ যোবায়ের আহমদ ইজতেমা ময়দানে মোনাজাত মঞ্চ থেকে আবেগঘন কণ্ঠে প্রার্থনা করছিলেন। তখন লাখ লাখ মুসল্লির আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে তুরাগতীর। অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর পাপাচার থেকে পরিত্রাণ চেয়ে প্রার্থনায় মশগুল হন টঙ্গীর তুরাগতীরসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা লোকজন। মাওলানা যোবায়ের যখন বয়ান মঞ্চে বসে হাত তুলে মোনাজাত শুরু করেন, তখন সকাল ৯টা ১১ মিনিট। হেদায়েতি বয়ান শেষে সবাইকে নামাজের নিয়মে বসে দোয়ায়ে ইব্রাহিম পড়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রথমে আরবিতে, পরে বাংলায় প্রার্থনা করেন। জনসমুদ্র থেকে তখন আমিন আমিন ধ্বনি ভেসে আসছিল। চিৎকার করে কান্না করছিলেন অনেকে। সৃষ্টিকর্তার কাছে টানা প্রায় ২৪ মিনিট প্রার্থনা করেন তারা। গতকাল রোববার এভাবেই আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ। ক্ষমা চাওয়ার এই কাতারে শামিল হতে শনিবার রাত থেকেই চারদিকের মানুষের স্রোত ছিল টঙ্গী অভিমুখে। ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে আজ সোমবার। 

ইজতেমা আয়োজকদের মিডিয়া সমন্বয়কারী হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, আখেরি মোনাজাতে ৪০ লাখের মতো লোক অংশ নিয়েছেন। গতকাল ফজরের নামাজের পর হেদায়েতি বয়ান হয়। ভারতের মাওলানা আবদুর রহমানের মূল বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আবদুল মতিন। যারা নতুন জামাতবন্দি হয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হবেন তাবলিগের সফরে, তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক হেদায়েতি বয়ান করা হয়। হেদায়েতের বয়ান হচ্ছে, যারা ইজতেমা থেকে তিন চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা কী আমল করবেন এবং অন্য যারা ফিরে যাচ্ছেন– তারা নিজ এলাকায় গিয়ে কী আমল করবেন, সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা। হেদায়েতি বয়ানের পরই ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা নসিহতমূলক কিছু কথা বলেন, যা বাংলায় তরজমা করেছেন বাংলাদেশের মাওলানা যোবায়ের। বয়ানে বুজুর্গরা বলেন, নামাজ হলো সবচেয়ে উঁচু আমল। নামাজ ছাড়া ইসলাম কল্পনা করা যায় না। আল্লাহর ভান্ডার থেকে কিছু নেওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হলো নামাজ। দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতের প্রতি আমাদের বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে। দুনিয়ার জিন্দেগির চেয়ে আখেরাতের জিন্দেগি হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী। পেরেশানি থেকে রক্ষার জন্য আমাদের ইমানি শক্তিকে আরও মজবুত করতে হবে। 

মোনাজাতে অংশ নিতে জনস্রোত
ইজতেমা ময়দানের দক্ষিণে খিলক্ষেত বিশ্বরোড থেকে এবং উত্তরে গাজীপুর চৌরাস্তা, পূর্বে পুবাইল, পশ্চিমে আশুলিয়া পর্যন্ত রিকশাসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখার ফলে শনিবার গভীর রাত থেকেই দীর্ঘ পথ হেঁটে ইজতেমাস্থল অভিমুখে ছুটতে থাকে মুসল্লিদের কাফেলা। এতে অন্তত ১৫ বর্গকিলোমিটারজুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশাল সমাগম হয়। ইজতেমা মাঠে পৌঁছতে না পেরে লাখো মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফজরের নামাজ পড়েন। তুরাগতীরের পুরো ইজতেমাস্থল ও চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার কোথাও তিলধারণের জায়গা ছিল না। বাসাবাড়ির ছাদে নারীরা অবস্থান নিয়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। 

তাশকিল কামরা
ইজতেমা ময়দানের উত্তর প্রান্তে তৈরি করা হয় তাশকিলের কামরা। ময়দানের খিত্তাগুলো থেকে চিল্লায় নাম লেখানো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জামাতবন্দি করে তাশকিলের কামরায় জায়গা করে দেওয়া হয়। এই মুসল্লিরা জামাতবন্দি হয়ে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদে গিয়ে তাবলিগের মুরব্বিদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দাওয়াতি মেহনতে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বেন। জামাতবন্দিদের মধ্যে ৪০ দিন, তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর ও আজীবন চিল্লাধারী রয়েছেন। তারা বিভিন্ন জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং বিভিন্ন দেশে গিয়ে দাওয়াতি কাজ করবেন।

বাড়ি ফেরার ‘যুদ্ধে’ মুসল্লিরা
আখেরি মোনাজাতের পর মুসল্লিরা বাড়ি ফেরার ‘যুদ্ধে’ নামেন। চারপাশের রাস্তায় ছিল মানুষের ঢল। যানবাহনে জায়গা না পেয়ে কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ পিকআপে, কেউবা বাসের ছাদে বসে রওনা হয়েছেন। কারও চোখেমুখেই ক্লান্তির ছাপ ছিল না। 

 

আরও পড়ুন

×