ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

জমির উর্বর মাটি কেটে অপরিকল্পিত বাঁধ

জমির উর্বর মাটি কেটে  অপরিকল্পিত বাঁধ

নেত্রকোনার কালিয়ারা গাবরাগাতিতে ভেকু দিয়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমির মাটি সমকাল

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:০৩

বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কৃষকরা। ফসলি জমির উর্বর মাটি কাটা বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, বাঁধ নির্মাণের নামে ঠিকাদারের লোকজন কৃষকদের প্রলুব্ধ করে ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে জমির টপ সয়েল বিনষ্টের পাশাপাশি পরিবেশেরও 
বিপর্যয় ঘটছে। মাটির ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন না সহজ-সরল কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদী থেকে ধনারখাল-কুমারপুর-নওয়াপাড়া বালস খালের উৎপত্তি। খালটি সিধলী বাজার থেকে সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে ৬ কিলোমিটার গিয়ে কংস নদে মিলিত হয়েছে। আশির দশক পর্যন্ত কৃষিতে অসামান্য অবদান ছিল কুমারপুর-নোয়াপাড়া খালের। কিন্তু নব্বই দশকের শুরু থেকে অপরিণামদর্শী লোকজনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে খালের ওপর। তাদের দখল-দূষণের শিকার হয়ে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ ও মাটি ভরাটের 
কারণে বিপন্ন হতে থাকে খালটি। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালটির সংস্কারে কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজ ও বরাদ্দের টাকা লুটপাটের কারণে বেহাল অবস্থায়ই থেকে যায় খালটি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে খালের বিদ্যমান আড়াআড়ি বাঁধগুলো অপসারণ 
না করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার প্রভাবশালী কিছু লোকের সহায়তায় জীবন রক্ষার নামে বাঁধ নির্মাণের কাজে হাত দেয়। ৪ দশমিক ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণে ব্যয়-বরাদ্দের পরিমাণ ৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা। 
সারোয়ার-বেলার (জেবি) ও প্রীতম এন্টারপ্রাইজ-হেলাল উদ্দীন (জেবি) নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বাঁধের নির্মাণ কাজ 
শুরু করেছে।
কথা হয় কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক দলের সভাপতি সালাউদ্দীন খান মিলকী, কুমারপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হাসেন আলী ফকির, আবু তাহের, পাটলী গ্রামের শহিদুল বারেকের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, বাঁধটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কুমারপুর, পাটলি ও নাড়িয়াপাড়াসহ প্রায় ২৫টি গ্রামে বর্ষার শুরুতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এ ছাড়া বোরো ও আমন উৎপাদন ব্যাহতসহ মানুষের ঘর-বাড়ি ও গবাদি পশুর ক্ষতি হবে। এলাকাবাসীর জন্য জীবন রক্ষাকারী বাঁধ হয়ে উঠবে জীবনঘাতি। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় কোনো সুফল বয়ে আনবে না। এসব কারণে বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে খাল খনন ও খালের বাঁধগুলো অপসারণ করে খালের উভয় পাশে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। পরে তাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। 
এদিকে কৃষকের জমির চারা ধান নষ্ট করে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল। জমির টপ সয়েলে থাকে সবচেয়ে ঘনত্বের জৈববস্তু। একবার কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নিলে তা আবার পূর্ণতা লাভ করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ বছর। কৃষকদের প্রলুব্ধ করে উর্বর জমির মাটি কেটে নিয়ে টপ সয়েল বিনষ্ট করছে ঠিকাদারের লোকজন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, যাচাই বাছাই ও এলাকার কৃষকদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাঁধটি নির্মিত হলে কৃষকের উপকারে আসবে।

আরও পড়ুন

×