‘ভিক্ষুকমুক্ত’ খুলনা শুধু নামেই

ফাইল ছবি
মামুন রেজা, খুলনা
প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫ | ০১:২১ | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ | ০৭:৪৮
ঘটা করে ২০১৭ সালে খুলনা নগরকে ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ ঘোষণা করেছিল প্রশাসন। সেই ঘোষণাই সার! পুনর্বাসনের উদ্যোগ কোনো কাজেই আসেনি। যাদের পুনর্বাসন করা হয়েছিল, তাদের প্রায় সবাই ফিরেছেন আগের পেশায়। খুলনা নগরীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বিভিন্ন মার্কেট, রেস্তোরাঁ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে হাত পাতছেন অসংখ্য ভিক্ষুক।
নগরীর ক্লে রোডে সাতসকালে থালা হাতে দেখা গেল সুফিয়া বেগমকে। ভিক্ষা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়ার জন্য ২০১৭ সালে তাঁকে সহযোগিতা করেছিল খুলনা জেলা প্রশাসন। তবে প্রশাসন থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি দাবি করে তিনি বলেন, ‘ভিক্ষা না করলে পেট চলবে কীভাবে? আমার কেউ নেই। ভিক্ষা করে খাই। থাকি নতুন বাজার বস্তিতে।’ নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় ভিক্ষা করছিলেন জাবেদ হোসেন নামে এক বৃদ্ধ। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন সোনাডাঙ্গা এলাকার এক বস্তিতে। তিনি বলেন, ‘ওই সময় ঝালমুড়ি ও চানাচুর বিক্রির সামগ্রী পেয়েছিলাম। তবে আমার কাজ করার সামর্থ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে হাত পাতি।’
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রথম জেলা হিসেবে খুলনাকে ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ করতে ২০১৬ সালের আগস্টে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কাজ শুরু করে জেলা প্রশাসন। তখন ৩ হাজার ৫৯৫ ভিক্ষুকের নাম নিবন্ধন করা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক দিনের বেতন, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, এনজিও ও বিত্তবানদের সহযোগিতায় ৮৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৭ টাকার তহবিল সংগ্রহ করা হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে পুনর্বাসনের জন্য তিন ধাপে ৩ হাজার ৪৬৩ ভিক্ষুককে তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৩ হাজার ৫৯৫ ভিক্ষুককে আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকার পুনর্বাসন সামগ্রী দেওয়া হয়। পরে ২০১৭ সালের ৮ মে আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ। বিষয়টি তৎকালীন সরকার আমলে নিয়ে একই পদ্ধতি বিভিন্ন জেলায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।
তবে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ ভেস্তে যায়। খুলনার বেশির ভাগ ভিক্ষুক ফিরে যান আগের পেশায়। নগরীর ফেরিঘাট মোড়ে ভিক্ষা করার সময় আজিবর শেখ জানান, তাঁর বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলায়। ঘরবাড়ি ও জমি নদীতে চলে যাওয়ার পর থেকে খুলনা লঞ্চঘাটে থাকেন। খুলনার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ায় তিনি তখন জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পাননি।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর খুলনা নগরের প্রতিটি মসজিদ ও কবরস্থানের গেটেই অসংখ্য ভিক্ষুক দেখা যায়। এ ছাড়া জেলার ৯ উপজেলায় ভিক্ষুকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করছেন।
এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, পুনর্বাসন কার্যক্রম পর্যাপ্ত ছিল না। কিছু সংখ্যক ভিক্ষুক অভ্যাসগতভাবে আগের পেশায় ফিরেছেন। ঠিকমতো তদারকির অভাবে জেলা প্রশাসনের সেই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের খুলনার উপপরিচালক কানিজ মোস্তফা বলেন, ভিক্ষুককে সহযোগিতা করার জন্য আপাতত তাদের কোনো তহবিল নেই।
- বিষয় :
- ভিক্ষা