নারায়ণগঞ্জে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ গ্রেপ্তার
আরও ৯ সহযোগী র্যাবের হাতে ধরা, ২১ লাখ টাকা জব্দ

আতাউল্লাহ
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫ | ০১:২০ | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ | ০৬:৪৮
মিয়ানমারকেন্দ্রিক রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ ছাড়া অন্য ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি আবাসিক এলাকার ভূমিপল্লি টাওয়ার থেকে আতাউল্লাহসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছে ২১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, একটি চাকু ও একটি স্টিলের ধারালো চেইন (ধারালো দাঁতযুক্ত ও দুই পাশে হাতলবিশিষ্ট) জব্দ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, আতাউল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির প্রধান। তিনি আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে খুনের নির্দেশদাতা। অন্তত চার আসামির জবানবন্দিতে ওই হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে আসে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা (স্কোয়াড্রন লিডার) রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরসারপ্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ। গ্রেপ্তার অন্যদের মধ্যে আছেন আরসা সদস্য মোস্তাক আহাম্মদ, মনিরুজ্জামান, সলিমুল্লাহ, মোসাম্মৎ আসমাউল হোসনা, মো. হাসান, আসমত উল্লাহ, হাসান ও মোসাম্মত শাহিনা।
তাদের মধ্যে মনিরুজ্জামান সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লি এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সলিমুল্লাহ, মোসাম্মৎ শাহিনা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন। তাদের মধ্যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে দুটি মামলায় মঙ্গলবার বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আতাউল্লাহকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে হাজির করা হয়। মামলা সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার ও সোমবার ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার গার্ডেন সিটি এবং নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লিতে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১১। নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তিন নারীসহ আরসার ১০ জনকে আটক করা হয়। মঙ্গলবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে র্যাব বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খোরশেদ আলম মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, গোপন বৈঠক করার সময় র্যাব অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ছয়জন এবং ময়মনসিংহ থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সংঘবদ্ধভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থেকে গুপ্তচরের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে ষড়যন্ত্র করার জন্য অশুভ পাঁয়তারার চেষ্টাকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীনূর আলম জানান, দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে আনা হয়েছে।
২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৩০টি চৌকিতে হামলা চালানোর জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসাকে দায়ী করেছিল। এর পর সেনাবাহিনী ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে। সে সময় হত্যা, ধর্ষণ এবং নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে প্রথম এই সংগঠনটিরই নাম শোনা গিয়েছিল। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আগে ‘ফেইথ মুভমেন্ট’ নামে তাদের তৎপরতা চালাত। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ছিল ‘হারাকাহ আল ইয়াকিন’ নামে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ তাদের এক রিপোর্টে বলছে, আরসা মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে। মক্কায় থাকে– এমন ২০ নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি গড়ে তোলে। সংগঠনটির নেতা আতাউল্লাহ। তিনি আবু আমর জুনুনি নামেও পরিচিত। আতাউল্লাহর বাবা রাখাইন থেকে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যান। আতাউল্লাহ বেড়ে উঠেছেন মক্কায়। সেখানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। ইউটিউবে তাঁর একটি ভিডিও থেকে ধারণা করা হয়, রাখাইনের রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে, সেটি এবং আরবি– এ দুটি ভাষাতেই তিনি অনর্গল কথা বলতে পারেন।
- বিষয় :
- আরসা