ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জুলহাসের কল্পনায়ও আসেনি এমনটা

জুলহাসের কল্পনায়ও আসেনি এমনটা

মাস্টার্স পাস জুলহাসের হাতে রিকশার হ্যান্ডল

ফরিদপুর অফিস

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০০:৩৫

অনার্স-মাস্টার্সের সনদ হাতে পেয়ে যখন সুন্দর ক্যারিয়ারের স্বপ্ন বুনছিলেন, তখন হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি একদিন তাঁর জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠবে রিকশার হ্যান্ডল। এক সময় পড়াশোনার খরচ চালাতে করেছেন রংমিস্ত্রির কাজ। এখন চালাচ্ছেন রিকশা।
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র জুলহাস বেপারি। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন, মাস্টার্স শেষ করেন ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে।
ফরিদপুরের ভাজনডাঙ্গায় জীর্ণশীর্ণ ছোট্ট এক ঘরে স্ত্রী, মেয়ে ও বাবা-মাকে নিয়ে বাস করেন জুলহাস। তাঁর জীবন কখনও সহজ ছিল না। এক সময় রংমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তবে ভালো একটি চাকরির আশায় পড়াশোনা চালিয়ে যান। ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করার পর তাঁর স্বপ্ন ছিল কোনো করপোরেট অফিসে চাকরি করবেন– হয়তো ব্যাংকে বা সরকারি কোনো দপ্তরে।  বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। চাকরির আবেদন করেছেন, পরীক্ষা দিয়েছেন, ইন্টারভিউয়ে অংশ নিয়েছেন। ভাগ্য তাঁর জন্য কোনো দরজা খোলেনি। কোথাও বলা হয়েছে ‘অভিজ্ঞতার অভাব’, কোথাও শুনেছেন ‘সুপারিশ বা তদবির লাগবে’। টাকা দিয়ে চাকরি করার ক্ষমতা ছিল না, রাজনৈতিক ছত্রছায়াও ছিল না, তাই বারবার ব্যর্থ হয়েছেন।
দিনের পর দিন চেষ্টা করেও চাকরি নামের সোনার হরিণের সন্ধান না পেয়ে এক সময় হাল ছেড়ে দেন। কেননা সংসারে ক্রমেই বাড়ছিল অভাব। বাবা-মা বৃদ্ধ, কাজ করতে পারেন না। আছে স্ত্রী, সংসার, তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া ছোট্ট মেয়ে 
জোবাইদার পড়াশোনা। সবকিছুই তাঁর সামান্য উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। 
‘আমি পড়াশোনা করেছি, একটা ভালো চাকরির স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু এখন আমার পরিচয় কী? আমি একজন রিকশাচালক। সমাজে আমার কোনো সম্মান নেই, কেউ আমাকে গুরুত্ব দেয় না।’ কথাগুলো বলার সময় জুলহাসের চোখে পানি জমে যায়। তাঁর ৯ বছরের একমাত্র মেয়ে জোবাইদা, যার ছোট্ট দুটি চোখে বাবার জন্য গর্ব থাকার কথা, সেখানে আজ শুধুই হতাশার ছায়া।
ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব পিয়াল ছেলেটিকে চেনেন। তিনি বলেন, জুলহাসের জীবনের গল্প শুধু তাঁর একার নয়, হাজারো মেধাবী তরুণের গল্প, যারা সিস্টেমের ব্যর্থতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু সুপারিশ আর টাকার জোরেই কি চাকরি পাওয়া যাবে? তাহলে জুলহাসদের মতো মেধাবী, পরিশ্রমী তরুণদের কী হবে? আর্থিক সাহায্য নয়, যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই পারে জুলহাসের জীবনে আলো ফেরাতে। 

আরও পড়ুন

×