ঊর্ধ্বমুখী হাসি সূর্যমুখীর

দিগন্ত ছুঁয়েছে সূর্যমুখীর হাসি। দুমকীর শ্রীরামপুরের জামলা এলাকা সমকাল
দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ২৩:৪৭
পটুয়াখালীর দুমকীর মাঠে মাঠে এখন সূর্যমুখীর সমাহার। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সোনালি ফুল। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন ফুলপ্রেমীরা। তাদের পদচারণায় মুখর গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন সূর্যমুখীর ক্ষেত। শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, এই ফুল এখন কৃষকদের কাছে এক অর্থকরী ফসল।
জানা গেছে, সূর্যমুখী তেলের ব্যাপক চাহিদা, কম খরচে চাষাবাদ ও অল্প সময়ে ফলন– এই তিন কারণেই সূর্যমুখীর দিকে ঝুঁকছেন দুমকীর কৃষক।
দুমকী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, একসময় এ অঞ্চলে সূর্যমুখী চাষ হতো না বললেই চলে। কিন্তু ভালো মুনাফা হওয়ায় উপজেলায় দিন দিন সূর্যমুখীর চাষ বেড়ে চলেছে। চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫ হেক্টর। বাস্তবে চাষাবাদ হয়েছে তার বেশি জমিতে। এ বছর বিশেষ করে শ্রীরামপুর ইউনিয়নের জামলা, কোহারজোড়, দক্ষিণ শ্রীরামপুর, উত্তর শ্রীরামপুর, রাজাখালী, চরবয়ড়া গ্রামে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখীর চাষাবাদ হয়েছে।
শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জামলা এলাকার কৃষক ধলু হাওলাদার বলেন, উপজেলার জামলা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি এ বছর ৭০ শতাংশ জমিতে বারি সূর্যমুখী-২ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
কৃষক বাবুল খান, মনির হোসেন, হালিমা বেগম ও মানসুরা বেগম জানান, কয়েক বছর ধরে তারা হাইসান-৩৬ জাতের সূর্যমুখী চাষ করছেন। এ বছর গাছে বেশ ভালো ফুল ফুটেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় প্রয়োজনমতো সেচ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে সূর্যমুখীর বীজ বাজারে বিক্রি করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইসমিতা আক্তার সোনিয়া বলেন, সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল হয়, তা পুষ্টিসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর। ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণে উপজেলার কৃষকদের সূর্যমুখী আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় দুই শতাধিক কৃষক-কৃষাণিকে বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের সূর্যমুখীর প্রদর্শনী প্লট তদারকের পাশাপাশি ও নানা করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।
দুমকী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন জানান, দেশে উৎপাদিত ভোজ্যতেল দিয়ে শতকরা ১২ ভাগ চাহিদা মেটানো সম্ভব। বাকি চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয়। ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে চাষিদের তেলজাতীয় শস্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ জন্য উপজেলায় শস্যমেলা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে চাষিদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আগ্রহী কৃষকদের মধ্যে প্রণোদনা হিসেবে সার, বীজ, তেলবীজ সংগ্রহ ও তেল নিষ্কাশনের যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আমদানিনির্ভরতা কমাতে উপজেলার চাষিদের সূর্যমুখীসহ অন্যান্য তেলজাতীয় শস্য উৎপাদনে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- সূর্যমুখী