জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আবারও গাছ কেটে ভবন নির্মাণের আয়োজন
সেগুন, তালসহ কাটা পড়বে অর্ধশত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কেটে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। রোববার দুপুরে তোলা- সমকাল
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:১৬
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন আবারও সবুজ ধ্বংসের আয়োজন সেরেছে। উদ্যোগ নিয়েছে অর্ধশতাধিক গাছ কাটার। ইতোমধ্যে গাণিতিক ও পদার্থ অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জায়গা চিহ্নিত করে সুতায় লাল নিশানা টানিয়েছে। তবে মহাপরিকল্পনা ছাড়া যত্রতত্র ভবন নির্মাণ ও প্রকৃতি ধ্বংসের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি স্থাপনার কাজ চলছে। প্রকল্পের অধীনে ছয়টি ১০ তলা নতুন হল করা হয়েছে। এসব স্থাপনার জন্য আগেই এক হাজারের বেশি গাছ কেটেছে প্রশাসন।
পরিবেশবাদীদের দাবি, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ক্যাম্পাসের প্রায় ৮৫ শতাংশ সবুজায়ন ধ্বংস হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাধা দিলেও কানে তোলেনি প্রশাসন। একের পর এক ভবন গড়ে উন্নয়ন বলে চালিয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী প্রশাসন। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নতুন প্রশাসন এসেও গাছ কাটার পথে হাঁটছে। গাছ না থাকলে প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। ধ্বংস হবে শিয়াল, বেজি, বাঘডাশ, গুঁইসাপ, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানায়, গাণিতিক ও পদার্থ অনুষদের সম্প্রসারিত ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি টাকা। ভবনটি নির্মাণে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পেছনে ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনের জঙ্গলের সেগুন, তালসহ বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত ৬০টি গাছ কাটতে হবে। পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী অরিত্র সাত্তার জানিয়েছেন, শুধু গাছ নয়, জায়গাটিতে ভবন নির্মাণ করা হলে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হবে। এ অঞ্চল বর্তমানে শিয়াল, বেজি, বাঘডাশ, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণস্থল। গাছ না থাকলে তাদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, নতুন ভবনের জন্য চিহ্নিত জায়গাজুড়ে বন্যপ্রাণীরা নিজেদের চলাচলের রাস্তা তৈরি করেছে। এটি ব্যবহার করে তারা শিকার থেকে শুরু করে নানা ধরনের খাদ্যের সন্ধানে যায়। স্থানটি নষ্ট হলে বন্যপ্রাণীরা চরম সংকটে পড়তে পারে।
বর্তমানে ক্যাম্পাসে স্থাপনা নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি)। নতুন করে অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ভবন নির্মাণের বিষয়ে কমিটির সদস্য সচিব ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন জানান, বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই জায়গাটি নির্ধারণ করেছেন তারা। আগে আরেকটি জায়গা ঠিক করা হলেও, পরিবেশবাদীদের আপত্তিতে সরে এসে নতুনটি নির্ধারণ করে টিএমসি।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা ছাড়া নগরায়ণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আমরা ক্যাম্পাসের উন্নয়ন চাই; তা হতে হবে টেকসই।’
এদিকে অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষনিধন ও যত্রতত্র ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং অবিলম্বে খাল খনন করে ক্যাম্পাসের প্রাণবৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের পেছনে গাণিতিক ও পদার্থবিজ্ঞান অনুষদের বরাদ্দকৃত স্থান এবং সবুজে ঘেরা সুইজারল্যান্ড পয়েন্টে মানববন্ধনে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (অমর্ত্য-ঋদ্ধ) সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ‘স্বৈরাচারী হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের প্রতিফলন মিলছে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রশাসনেও। মহাপরিকল্পনার দরপত্র নিয়ে টালবাহানা, যত্রতত্র গাছ কাটার আয়োজন এবং লেকগুলোকে মাঠে রূপান্তরসহ নানা কাজে প্রশাসনের চটুলতা দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই, দ্রুত প্রশাসন যত্রতত্র শপিং লিস্ট উন্নয়ন না করে মাস্টারপ্ল্যানের ভিত্তিতে কাজ করুক। লেকগুলো খননের কাজ শুরু করুক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান জানান, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় প্রাণ-প্রকৃতির দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এ জন্য যথাযথ কমিটিও রয়েছে। তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে নতুন ভবনের জন্য জায়গাটি নির্ধারণ করেছে।
- বিষয় :
- গাছ কাটা