ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

৬০০ টাকার পে-অর্ডার হয়ে গেল ৬ কোটির

৬০০ টাকার পে-অর্ডার হয়ে গেল ৬ কোটির

.

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫ | ২৩:৪২

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিএল) পুরোনো (স্ক্র্যাপ) মালপত্র বিক্রির পুনঃ দরপত্রের ব্যাংক কর্তৃক পে-অর্ডার দাখিলে বড় জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে মিলেছে পে-অর্ডার টেম্পারিংয়ের (কারসাজির মাধ্যমে তথ্য পরিবর্তন) নজির।
জানা গেছে, মালপত্র কেনার জন্য দাখিলকৃত দরপত্রগুলোর একটি বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের। এই প্রতিষ্ঠান ৭৫ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়। পরে তাদের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায় ৬০০ টাকার পে-অর্ডারকে ঘষামাজা করে ৬ কোটি টাকার পে-অর্ডার বানিয়ে দরপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হয়েছে। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সংগৃহীত পে-অর্ডার নিয়ে এমন জালিয়াতির ঘটনায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে।  
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি। এখানকার পুরোনো ওয়েট প্রসেস কারখানার অব্যবহৃত অকেজো হিসেবে চিহ্নিত বিভিন্ন স্থাপনাসহ স্ক্র্যাপ মালপত্র এক লটে বিক্রির দরপত্র প্রকাশ করা হয় জাতীয় পত্রিকায়। প্রকাশিত পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে ৫৯ কোটি ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৬৫ টাকার ধারণা দিয়ে প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয় ১০ মার্চ। ওই তারিখে কারখানা থেকে ৭১টি দরপত্র বিক্রি করা হলেও 
বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একত্রিত হওয়ায় দরপত্র জমা পড়ে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে মেসার্স মমিনুল হক নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৪৮ কোটি টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে দরপত্র দাখিল করে। সন্তোষজনক দর না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে ৫ মে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। 
দ্বিতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কারখানা থেকে ৫৭টি দরপত্র বিক্রি করা হয়। রোববার দরপত্র দাখিলের শেষ দিনে প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় প্রধানের (বাণিজ্যিক) কার্যালয়, নেজারত শাখা, সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিলেটের গণপূর্ত বিভাগ কার্যালয়ে দরপত্র গ্রহণ করা হয়। দরপত্র আহ্বানের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র আটটি প্রতিষ্ঠান তাদের দরপত্র দাখিল করেছে।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী আটটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রথম দরদাতা নির্বাচিত হয় বিল্লাল এন্টারপ্রাইজ ৭৫ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর উল্লেখ করে। দ্বিতীয় দরদাতা নির্বাচিত হয় বিছমিল্লাহ-সোনালি চেলা ইঞ্জিনিয়ারিং দর ৭১ কোটি ১ লাখ টাকা। বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের দরপত্রের সঙ্গে জমাকৃত পে-অর্ডারের মূল্য সঠিক থাকলেও পে-অর্ডার ঘষামাজা থাকায় সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে দরপত্র পরিচালনা কমিটির কাছে তাৎক্ষণিকভাবে মেসার্স বিছমিল্লাহ-সোনালি চেলা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 
সন্দেহজনক পে আর্ডারটির বিষয়ে জানতে বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে 
খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকাবার কল করেও সাড়া মেলেনি। স্থানীয়রা জানান, পে-অর্ডার জালিয়াতির খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তিনি 
গা-ঢাকা দিয়েছেন।
ভুয়া পে-অর্ডার দাখিলের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপক বলেন, দরপত্রের সঙ্গে দাখিলকৃত ভুয়া পে-অর্ডারটির বিষয়ে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ২১ মে আমির আলী নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির দরপত্রে অংশ নেওয়ার জন্য ৬০০ টাকার একটি পে-অর্ডার নিয়েছেন, এটি ৬ কোটি টাকার কীভাবে হলো, তা তাদেরও জানা নেই। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে জালিয়াতির উদ্দেশ্যেই কারসাজির মাধ্যমে ব্যাংকের পে-অর্ডারটির তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রহমান বলেন, দরপত্রের সঙ্গে দাখিল করা পে আর্ডারটি ভুয়া বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য দরদাতাদের দাখিলকৃত দরপত্রের কাগজপত্রও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। লিখিতভাবে পে-অর্ডার জালিয়াতির বিষয়টি জানানোর 
পর বিল্লাল এন্টারপ্রাইজের দরপত্র বাতিল করা হবে 
এবং এর পাশাপাশি ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×