ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইতিহাস

জমিদারবাড়িতে ২০০ বছরের কীর্তি

জমিদারবাড়িতে ২০০ বছরের কীর্তি

উনিশ শতকে নির্মিত বাড়িতে আছে ২০০ বছরের পুরোনো জিনিসপত্র। এগুলোর কোনোটি বাইরের দেশ থেকে আনা, কোনোটি আবার দেশেই তৈরি সমকাল

 মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) 

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫ | ০১:১৬ | আপডেট: ০১ জুন ২০২৫ | ০৭:৪৪

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা সদর থেকে ৫০০ গজ দূরে বালিয়াটি গ্রাম। এই গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ সাতটি প্রাসাদ, যা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামে পরিচিত। উনিশ শতকে নির্মিত এসব প্রাসাদে আছে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো জিনিস। এগুলোর কোনোটি বাইরের দেশ থেকে আনা, কোনোটি আবার দেশেই তৈরি। এসব পুরাকীর্তি বালিয়াটি জমিদার বাড়ির আকর্ষণ বাড়িয়েছে। কারুকার্যখচিত প্রাসাদ ও পুরাকীর্তি দেখতে ভিড় করেন দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী।

জানা গেছে, এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বালিয়াটি গ্রামের জমিদার গোবিন্দরাম সাহা। তিনি ছিলেন আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ের এক বড় মাপের লবণ ব্যবসায়ী। দধীরাম, পণ্ডিতরাম, আনন্দরাম ও গোলাপরাম– এই চার ছেলেকে রেখে গোবিন্দরাম প্রয়াত হন। ধারণা করা হয়, তাদের দ্বারাই পরে বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ হয় বালিয়াটি প্রাসাদ।
এই প্রাসাদ ৫ দশমিক ৮৮ একর জমির ওপর নির্মিত। এর ভেতরে রয়েছে দুই শতাধিক কক্ষবিশিষ্ট সাতটি ভবন। সামনের দিকে আছে চারটি, পেছনের দিকে তিনটি। প্রাসাদের পেছনে রয়েছে অন্দরমহল। এর উত্তর দিকে সাত ঘাটলা পুকুর। পুরো অংশের চারদিক সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা। দক্ষিণ প্রাচীরে পাশাপাশি একই ধরনের চারটি খিলান দরজা রয়েছে। প্রতিটির ওপর একটি করে সিংহের মূর্তি বসানো। স্থাপনাগুলোর আকর্ষণীয় দিক হলো– সারিবদ্ধ বিশাল আকৃতির করিনথিয়ান থাম, লোহার বিম, ঢালাই লোহার পেঁচানো সিঁড়ি, জানালার রঙিন কাচ, কক্ষের অভ্যন্তরে বিশাল আকৃতির বেলজিয়াম আয়না, কারুকার্যখচিত দেয়াল ও মেঝে ঝাড়বাতি।

বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত হচ্ছে বালিয়াটি প্রাসাদ। পশ্চিম দিক থেকে দ্বিতীয় স্থাপনাটির দোতলার একটি অংশ জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এই জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে ১৫টি লোহার সিন্দুক। এসব সিন্দুকে মূল্যবান দ্রব্য রাখতেন জমিদাররা। জাদুঘরের দোতলায় উঠলে চোখে পড়ে কারুকার্যমণ্ডিত রংমহল। বিশাল হলরুমসহ ওই রংমহলের সঙ্গে আরও পাঁচটি কক্ষ। রংমহল এবং ওই সব কক্ষে শোভা পাচ্ছে জমিদারদের ব্যবহৃত হারিকেন, হ্যাজাক বাতি, গ্রামোফোন বাক্স, ক্যাশ বাক্স, নামফলক, বদনা, ঝুলন্ত প্রদীপ, ঝাড়বাতি, পূজার আসন, পাথরের ছাইদানি, দেয়াল আয়না, কাঠের সিন্দুক, শ্বেতপাথরের গরু, কাঠের আলমারি, ফুলদানি, চেয়ার, আলনা, পালঙ্কসহ সংগৃহীত বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন।

লোকমুখে শোনা যায়, জমিদারদের রংমহলে নাচগান চলত। সেই সময় বালিয়াটি গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। হ্যাজাক লাইট ও বিশেষ ধরনের হারিকেন জ্বালিয়ে কক্ষ আলোকিত করা হতো।

রংমহলের জন্য ইংল্যান্ড থেকে কয়েকটি ঝাড়বাতি আনা হয়েছিল। সেগুলো এখনও দেখলে মনে হবে, কেবল লাগানো হয়েছে। প্রতিটি ঝাড়বাতির গায়ে ‘এইচ কে আর’ অর্থাৎ, জমিদার হরেন্দ্র কুমার রায়চৌধুরীর নাম খচিত। ২০০ বছর আগে জমিদারদের ব্যবহৃত সেগুন কাঠের কমোড রয়েছে। এ ছাড়া আছে কিছু বেতের চেয়ার।

বালিয়াটি প্রাসাদ জাদুঘরের সহকারী কাস্টোডিয়ান মো. নিয়াজ মাখদুম বলেন, রোববার ছাড়া পাঁচ দিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর খোলা থাকে। সোমবার খোলা থাকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা। পাঁচ বছরের কম বয়সীরা টিকিট ছাড়াই প্রবেশ করতে পারে।

আরও পড়ুন

×