জলজট সংকটে দুই জেলা শহর

মৌলভীবাজার জেলা শহরের ফাটাবিল এলাকায় বাসাবাড়ি পানির নিচে। রোববার তোলা ছবি- সমকাল
হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫ | ২০:৪৪
কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে ডুবতে বসেছে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা। এরইমধ্যে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। দুই জেলা শহর ঘুরে এমন তথ্যই জানিয়েছেন সমকালের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী এবং মৌলভীবাজার প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম।
হবিগঞ্জ পৌর এলাকা। শহরের প্রধান সড়কসহ অলিগলি এরইমধ্যে পানিতে সয়লাব। বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও ঢুকছে পানি। যে কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বর্ষায় একই চিত্র, একই ভোগান্তি, একই আশ্বাস। বছর ঘুরে সেই ভোগান্তি ফিরে আসে। কর্তৃপক্ষের বোধ উদয় হয় না। অপরদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরবাসী সচেতন না হলে এ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো পথ নেই। জলাবদ্ধতা দূর করতে নালা পরিষ্কার করতে গেলে গাদা গাদা পলিথিন পাওয়া যায়। সেগুলো নাগরিক অসচেতনতার দৃশ্যমান প্রমাণ।
বৃষ্টির দিন শুরু হলেই হবিগঞ্জ পৌর শহরে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। এতে ক্ষয়ক্ষতি আর দূর্ভোগের ষোলআনা পূর্ণ হয় স্থানীয়দের। পৌর কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ কার্যক্রমসহ নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। রোববার শায়েস্তানগর এলাকায় পানি উন্নয়নের বোর্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের প্রধান সড়কের ওই স্থানটিতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটিছে। এলাকার দোকানপাট, বাসাবাড়িতেও উঠছে বৃষ্টির পানি।
একই অবস্থা ফায়ারসার্ভিস রোড, রাজনগর, গোসাই নগর, পিটিআই রোড, ঘাটিয়া বাজার, চৌধুরী বাজার, উত্তর শ্যামলী, সার্কিট হাউজ, ইনাতাবাদ, থানার মোড়, দক্ষিণ শ্যামলী ও পুরাণ মুন্সেফী এলাকাসহ বেশিরভাগ পাড়া মহল্লার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অল্প বৃষ্টিতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড সড়ক, শায়েস্তানগর আবাসিক এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে হাজার হাজার টাকার গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নষ্ট হয়। ড্রেনেজ কার্যক্রমে গতি না থাকা, সময় মতো এসব কাজ সম্পন্ন না করা এবং অনেক এলাকায় ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান না থাকায় এই সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। যা প্রয়োজনের সময় কাজে আসছে না।
রিকশাচালক নুর মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শহরে তেমন যাত্রী নেই। যে ক’জন আছেন তারা পানির জন্য রিকশা নিয়ে চলতে পারেন না। মোটরে পানি ঢুকে তা নষ্ট হয়ে যায়। টমটম চালক সুমন বলেন, শহরের জলাবদ্ধতা থেকে মাফ নেই। অল্প বৃষ্টিতেই খারাপ অবস্থা হয়। এই শহরে আর টমটম চালানো যায় না।
ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির পানি তার দোকানে ঢুকেছে। মালামাল নষ্ট হচ্ছে। সরানোর জায়গাও পাচ্ছেন না।
হবিগঞ্জ পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ নির্মাণ কাজ চলমান। এগুলো শেষ হলেই আশা করা যায় শহরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।
এদিকে পানি নিষ্কাষণে অব্যবস্থাপনার কারণে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মৌলভীবাজার শহরের মানুষ। জেলার দু’টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরো বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে শহরে চলাচল কঠিন হয়ে যাবে।
গত তিন দিনের অবিরাম বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে প্রায় স্থবির হয়ে গেছে শহুরে জীবন। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত তিন দিনে মৌলভীবাজারে ৩৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের প্রভাবে মনু নদের পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে ২৯, রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ৮ ও জুড়ী নদীর ভবানীপুর পয়েন্টে ১৪৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ দিকে ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা শহরের পশ্চিমবাজার, গোবিন্দশ্রী, সৈয়ারপুর, ফাটাবিলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জলজটে নাকাল সেখানকার বাসিন্দারা। অনেকের ঘরে হাঁটু পানি। গির্জাপাড়া এলাকার বাসিন্দা কবি মহিদুর রহমান জানান, মৌলভীবাজার শহরের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ কোদালী ছড়া। এছড়াটি নিয়মিত পরিষ্কার না করায় আবর্জনা জমে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে সদর উপজেলার শেরপুরবাজারে পানি নিষ্কাষণের পথ বন্ধ করে অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও বসতি গড়ে তুলেছেন। এতে ওই এলাকার ব্রাহ্মণগ্রাম, মুসলিমনগর, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ও শেরপুর আবাসিক এলাকার মানুষ তিন দিন ধরে জলজটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা তাপস দেব নাথ জানান, পানি চলাচলের পথ বন্ধ হওয়ায় ময়লা পানি ঢুকেছে বাড়িতে। ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। রাজনগর উপজেলার ইলাশপুর গ্রামের সিএনজি অটোরিকশাচালক আব্দুর রহমান জানান, টেংরাবাজারসহ আশাপাশের এলাকার পানি নিষ্কাষণের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে আখালিয়া নদী। নদীটি ভরাট আর দখলে সরু খালে পরিণত হয়েছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির প্রবাহ। শহীদ সুদর্শন উচ্চ বিদ্যালয়সহ টেংরাবাজারের দক্ষিণ ও উত্তরাংশের লোকালয় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন সমকালকে বলেন, সদর উপজেলার শেরপুরবাজার এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে পানি নিষ্কাষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বুলবুল আহমদ বলেন, শহরের পানি নিষ্কাষণের একমাত্র অবলম্ভন কোদালীছড়া হলেও এ ছড়াটির সীমানা পৌর এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শহর এলাকা খনন ও পরিষ্কার করা হলেও বাইরে পানি নিষ্কাষণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
- বিষয় :
- হবিগঞ্জ
- মৌলভীবাজার
- জলজট