বেতন-বোনাস না পাওয়ায় সড়কে অবস্থান শ্রমিকদের

বৃষ্টির মধ্যেও সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেওয়া শ্রমিকরা। রোববার বিকেলে সাভারের হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়কে সমকাল
নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার
প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫ | ০১:০৬
বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে সাভারের হেমায়েতপুরে সড়ক অবরোধ করেছিলেন শ্রমিকরা। এ কারণে গতকাল রোববার বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেন।
বিক্ষোভকারীরা বসুন্ধরা পোশাক কারখানার শ্রমিক। তারা জানান, বকেয়া বেতন পরিশোধ না করায় সম্প্রতি পুলিশ ওই কারখানার মালিক শহীদুল্লাহকে হেফাজতে নেয়। তিনি এপ্রিলের বকেয়া বেতন ১ জুন ও মে মাসের বেতন ৪ জুন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। রোববার এপ্রিলের বেতন তুলতে গিয়ে শ্রমিকরা জানতে পারেন, কারখানার মালিক পলাতক। এতে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি নেন তারা। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিকেল ৩টার দিকে হেমায়েতপুর-সিংগাইর সড়ক অবরোধ করেন। বৃষ্টিতে ভিজেই সেখানে অবস্থান করেন রাত ৮টা পর্যন্ত। ওই কারখানার শ্রমিক শিল্পী আক্তার বলেন, তাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া। ঈদ বোনাসও পাননি। এতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেছে। পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সড়কেই থাকার ঘোষণা দেন তিনি।
বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় ঘর ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারছেন না বলে জানান পারুল আক্তার নামে আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘দোকানদার পর্যন্ত বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আমরা কী খাব, কোথায় যাব? বাড়ির মালিক বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে। সামনে আবার কোরবানির ঈদ! বেতন-বোনাস না পেলে বাড়িতেও যেতে পারব না।’
শ্রমিকদের দাবি, প্রয়োজনে কারখানা বিক্রি করে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ, পুলিশ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানান তারা।
পাঁচ ঘণ্টা ধরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানবাহন আটকা পড়ায় সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটে
চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী-পথচারী। রাত
১১টা পর্যন্ত ওই সড়কে শ্রমিকদের অবস্থানের তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা, বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস ঈদের আগেই পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কারখানার মালিক শহীদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কারখানায় গিয়ে কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়ার ভাষ্য, আগেও শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় কর্মসূচি পালন করে। তখন তারা মালিককে এনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তখন শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধের জন্য মালিক ৫৮ লাখ টাকা নিয়ে আসেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তা মানেননি। তারা একসঙ্গে সব পাওনা পরিশোধের দাবি তোলেন। কারখানা মালিক দুই ধাপে তা পরিশোধের আশ্বাস দেন। রোববার বিকেলে তা পরিশোধের সময় দেওয়া হলেও সকাল থেকেই তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন। রাত ১১টা পর্যন্ত শ্রমিকরা বৃষ্টির মধ্যেও রাস্তায় অবস্থান করছেন। কিছু শ্রমিক চলে গেলেও অনেকে আছেন। তারা বেতন-ভাতা পরিশোধ না করলে রাস্তা না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি তারা বিজিএমইএকে জানিয়েছেন।
- বিষয় :
- দাবি