ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

৯ মাসের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি চার বছরেও

৯ মাসের নির্মাণকাজ শেষ  হয়নি চার বছরেও

ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের জিল বাংলা চিনিকলের পাশে দিঘলকান্দি রেল সেতু সমকাল

 দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫ | ০১:০৮

ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের জিল বাংলা চিনিকলের পাশে দিঘলকান্দি রেলসেতুটির কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। সেতু নির্মাণকাজের চুক্তির মেয়াদ ছিল ৯ মাস। 
অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের রেলসেতুর কাজ। তবে ঠিকাদার বলছেন, রেল কর্তৃপক্ষ সময়মতো গার্ডার সরবরাহ করতে না পারায় কাজ শেষ করা যায়নি।
জানা গেছে, সেতুটি ২০২০ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই পথে রেল চলাচল সচল রাখতে ও ঝুঁকিমুক্ত করতে একই বছর রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সেতুটি পুনর্নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কাজ পায় এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড সেন্টার নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণের জন্য ৯ মাস সময় দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। কিন্তু চার বছর শেষ হতে চললেও শেষ হয়নি সেতুটির সংস্কার।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন দেওয়ানগঞ্জ। এই পথে প্রতিদিন তিস্তা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ও জামালপুর কমিউটার নামে চারটি ট্রেন চলে। যাওয়া-আসায় প্রতিবারই ট্রেনগুলোকে নির্মাণাধীন সেতুর ওই স্থানে দাঁড়াতে হয় এবং দায়িত্বরত রেলকর্মীর অনুমতিপত্র নিয়ে সেতুটি পার হতে হয়। সেতুটিতে এখনও বসানো হয়নি স্টিলের গার্ডার, ওয়াল ক্যাপ। সেতুটির ওপর রেললাইনে স্লিপারে কাঠের বিটের পাত লাগানো হলেও তা নড়বড়ে। মৃদুগতিতে ট্রেন চলাচলের সময়ও সেতুটি নড়েচড়ে ওঠে। তা ছাড়া দুই পাশের ওয়াল, ব্লক ও মাটিকাটা, ঢালাইয়ের কাজসহ অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই ট্রেনগুলোকে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।
সরদারপাড়া গ্রামের ট্রেনযাত্রী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাঝে মাঝে জামালপুর-ময়মনসিংহসহ ঢাকায় যাতায়াত করি। সেতুর ওপর ট্রেন উঠলে নড়েচড়ে ওঠে, তখন ভয় লাগে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও প্রতিকারে কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
মধ্যেরচরের ট্রেনযাত্রী সাইফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে রেলসেতুটির নির্মাণকাজ চলছে। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ট্রেনযাত্রীরা। যাতায়াতের সময় ওই স্থানে ট্রেন থেমে যায়। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেখানে মাঝে মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।
চরভবসুর পূর্বপাড়ার সুরুজ মিয়ার ভাষ্য, অনেক দিন ধরে দেখছেন রেলসেতুটির কাজ চলছে। 
মাঝে মধ্যে কাজ চলে আবার বন্ধ থাকে। সেতুর ওই স্থানে এসে প্রতিটি ট্রেন থামে। মৃদুগতিতে সেতু পার হয়। বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে কথা হয় সেতুটির নির্মাণকাজের ঠিকাদার সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কাজ করতে সময় লাগে। সে কারণে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। দুবার নকশা বদল হয়েছে। গার্ডার পাওয়া যাচ্ছিল না, সে কারণে রেল কর্তৃপক্ষ গার্ডার দিতে বিলম্ব করেছে। তবে এখন কাজ চলছে। শিগগিরই শেষ হবে।’
দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন মাস্টার আব্দুল বাতেন জানান, রেলসেতুটি নির্মাণ করা খুব জরুরি। সেতুর ওই স্থানে একজন রেলকর্মী রাখা হয়েছে। তিনি ট্রেন চলাচলের সময় ঝুঁকির বিষয়টি দেখেন। তাতেও ঝুঁকি থেকে যায়। দ্রুত গতিতে সেতুটি নির্মাণকাজ শেষ করা প্রয়োজন।
রেলওলের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী সিরাজ জিন্নাত সমকালকে বলেন, ওই রেলসেতুর কাজ দ্রুতই শেষ হবে। সেতু নির্মাণ করতে আনুষঙ্গিক যে উপকরণ প্রয়োজন, তা ওই স্থানে নেওয়া হয়েছে। ৬০ ফুট একটি গার্ডার ওই সেতুতে প্রয়োজন, যা রেলপথে বহন করতে না পারায় কাজটি বিলম্বিত হলো। গার্ডারটি কেটে ছোট করে সেতুর ওই স্থানে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। সময় স্বল্পতার জন্য ঈদের আগে গার্ডারটি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঈদের পর ওই স্থানে নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×