ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

হুমকিতে জলাবদ্ধতা প্রকল্প

হুমকিতে জলাবদ্ধতা প্রকল্প

.

 সারোয়ার সুমন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫ | ২২:৪৪

চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্বপূর্ণ সব সংস্থারই বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ কমে যাওয়ায় হুমকিতে পড়বে জলাবদ্ধতা প্রকল্প। জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের গতি কমে যেতে পারে। সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অধীনে ২১টি খালের জমি অধিগ্রহণ কাজও আটকে যাবে। 
এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের অধীন স্লুইসগেট ও বন্যা প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণকাজ আটকে যেতে পারে। এতে নগরের জলাবদ্ধতার ভোগান্তি বাড়তে পারে। বন্দরের অধীনে বে টার্মিনাল নির্মাণ আট বছর ধরে ঝুলে আছে। বরাদ্দ না মিললে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই টার্মিনালটির নির্মাণকাজে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া কমে যেতে পারে মহেশখালীর মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের গতিও।

চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য গত অর্থবছর ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবারের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। এই হিসাবে গতবারের তুলনায় বাজেটে চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ কমেছে ৫০৭ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমেছে জলাবদ্ধতার মূল প্রকল্পেও। গতবার তিনটি সংস্থার অধীনে বাস্তবায়নাধীন চারটি প্রকল্পের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এবার সেটি রাখা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রামের জন্য যা বরাদ্দ রাখা হয়, বছর শেষে মেলে না সেই বরাদ্দও। সর্বশেষ অর্থবছরেই বরাদ্দের তুলনায় সংশোধিত বাজেটে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা কম পেয়েছে চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গতবারের তুলনায় এবার কিছু বেশি বরাদ্দ পেলেও চাহিদার তুলনায় সেটি অপ্রতুল। সংশোধিত বাজেটে যদি বরাদ্দ আরও কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে উন্নয়নকাজ পরিচালনা করা কঠিন হবে।

বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পায়রা বন্দর
তিন সমুদ্রবন্দরের মধ্যে দেশের ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু বরাদ্দের দিক থেকে পিছিয়ে এই বন্দর। গত অর্থবছরে ৩ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা বাজেটের বিপরীতে চট্টগ্রাম বন্দর পেয়েছে ২ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। কিন্তু পায়রা সমুদ্র বন্দর ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা বাজেটের বিপরীতে বরাদ্দ পায় ২ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। এবারও আনুপাতিক হারে চট্টগ্রামের তুলনায় বেশি বরাদ্দ পেয়েছে অন্য দুই বন্দর। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের ৯২ ভাগ পণ্য নিয়ন্ত্রণ করা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। অথচ পায়রা ও মোংলা বন্দরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে যথাক্রমে ৭৩৫ কোটি ও ৬৪৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নকাজ। সেটির জন্য এবারে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। গতবার এ বাজেট ছিল ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। 

কমেছে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বরাদ্দও
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ, চসিক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত অর্থবছরে চারটি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন সিডিএর সবচেয়ে বড় প্রকল্পে এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। গতবার এই বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া সিডিএ চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়ক ও স্লুইসগেট নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা, গতবার ছিল ৪০০ কোটি টাকা।  

ব্যতিক্রম চসিক ও ওয়াসা 
গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটির বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫৫০ কোটি টাকা। এবার সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। একইভাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য গতবারে বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি টাকা, এবার বরাদ্দ ৮০৩ কোটি টাকা। সিডিএ বরাদ্দ পেয়েছিল ২ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা, এবারে বরাদ্দ ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। 

বাজেটের তুলনায় মেলে না বরাদ্দ
সব মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চার সংস্থা গত অর্থবছরের বাজেটে ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। এই হিসাবে এক অর্থবছরেই বরাদ্দ কম পেয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। জলাবদ্ধতার চার প্রকল্পেও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এবার যে বাজেট রাখা হয়েছে, সংশোধিত বাজেটে তা আরও কমে যেতে পারে। ফলে বন্দরনগরীর জন্য অপেক্ষা করছে বড় দুঃসংবাদ।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামকে মুখে বাণিজ্যিক রাজধানী বলে সবাই। কিন্তু সেটি কেউ অন্তরে ধারণ করে না। তাই এটি একটি ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। 

আরও পড়ুন

×