৫৪ বছরেও হয়নি পর্যটন কেন্দ্র দর্শনার্থীরা ছুটছেন পথেপ্রান্তরে

জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় রানীগঞ্জ সেতুতে ঈদের সময় দর্শনার্থীদের ভিড়। ছবি: সমকাল
তাজউদ্দিন আহমদ, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫ | ০৪:৩৩
বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরেও পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই পিছিয়ে রয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা। বিগত ৫৪ বছরেও এ উপজেলায় কোনো বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
সুনামগঞ্জের অন্যান্য এলাকার মতো জগন্নাথপুরের বাসিন্দারাও ভ্রমণপিপাসু। দর্শনীয় স্থানে সময় কাটানোর সুযোগ খোঁজেন। যথেষ্ট সুযোগ না থাকায় উপজেলার একটি ভবনের ছাদ, নতুন সড়ক, সেতু ও পুকুরপাড়কেই বেছে নিয়েছেন বিনোদনপিপাসুরা। নিজ এলাকা ছেড়ে ছুটছেন দেশের বিভিন্ন জায়গার পর্যটন কেন্দ্রে।
ঈদুল আজহার দিন থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত দেখা গেছে উপজেলার বহু মানুষ কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় রানীগঞ্জ সেতুর প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিচরণ করছেন। সেখানে তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সের মানুষের ভিড়। সেতুর দুই পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছেন অনেকে। পুরো সেতু এলাকায় ঈদের আনন্দ উৎসব বিরাজ করছে।
অপর দিকে ঈদে দর্শনার্থীর ঢল নামে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়ন মজিদপুর পয়েন্ট এলাকায় ছমির উদ্দিনের মালিকানাধীন একটি মার্কেট ভবনের ছাদে। সেখানে কিছু ফুলের টব ও ছাতা দিয়ে চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা রয়েছে। আছে কফি হাউস। ৫০ টাকা টিকিটে সেখানে গিয়ে সময় কাটান তরুণ-তরুণীরা। অনেকে কফির কাপে জমিয়ে আড্ডা দেন। এ ছাড়া চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের কবিরপুরে আব্দুল হান্নান ছুফি মিয়া চৌধুরীর পুকুরপাড়েও দেখা গেছে দর্শনার্থীর ভিড়।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট বিভাগের মধ্যে অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত একটি উপজেলা হচ্ছে জগন্নাথপুর। এখানে চাকরিরত সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর অধিকাংশ জগন্নাথপুর উপজেলাকে দ্বিতীয় লন্ডন বলে থাকেন। এর কারণ, জগন্নাথপুরের সিংহভাগ মানুষ যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন। দেশের অর্থনীতিতে জগন্নাথপুরের রেমিট্যান্সযোদ্ধারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। প্রবাসী অনেকে ঈদের সময় দেশে আসেন। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা থাকলেও উদ্যোগ নেই। অবকাশ যাপনের ব্যবস্থা না থাকায় একদিকে যেমন এখানকার মানুষ বঞ্চিত; তেমনি আর্থসামামাজিক উন্নয়নেও এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
সচেতন মহল মনে করছে, উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামের পাশের নলজুর নদীর তীরে, রানীগঞ্জ সেতু এলাকা, মইয়ার হাওরের মহাসড়কের মতো স্থানগুলো হয়ে উঠতে পারে অবকাশ যাপন ও বিনোদনের সম্ভাবনাময় কেন্দ্র। এ ছাড়াও সংস্কারহীন পরিত্যক্ত পাইলগাঁও জমিদার এস্টেট সংরক্ষণ করে পর্যটন স্পট করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক কিছু উৎস আছে যেগুলো কাজে লাগানো গেলে স্থানীয় পর্যায়ে পর্যটনের বিকাশ সম্ভব। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জগন্নাথপুরে পর্যটন শহর গড়ে তুলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে পারে।
রানীগঞ্জের বাসিন্দা জুয়েল আহমদ বলেন, ২০২২ সালে রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণ করার পর থেকে সেতু এলাকায় পর্যটকরা ঘুরতে আসছেন। প্রতি বছরই দুই ঈদে মানুষের ঢল নামে সেতুতে। যদি সেতুর পাশে পর্যটন কেন্দ্র করা যায় তাহলে চাঙা হবে অর্থনীতি।
মজিদপুরের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথপুরে কোনো পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় একটি মার্কেটের ছাদ বিনোদনপ্রেমীদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। নানা উপলক্ষে এখানে মানুষের ভিড় জমে।
জগন্নাথপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় মজিদপুর কফি হাউসে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদের বন্ধে পরিবা-পরিজন নিয়ে একটু ঘোরাঘুরির জায়গা নেই। এ উপজেলায় কোনো বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় বাধ্য হয়ে কফি হাউসে আসতে হয়।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় সরকারিভাবে একটি পর্যটন বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলতে দায়িত্বকালীন চেষ্টা করেছিলেন তিনি। দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরকত উল্লাহ বলেন, জগন্নাথপুরে তিনি নতুন। এমন সম্ভাবনার দিকগুলো খুঁজে দেখে জনপ্রত্যাশা পূরণে কাজ করার ইচ্ছা আছে তাঁর। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার কথাও জানান তিনি। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।
- বিষয় :
- সুনামগঞ্জ