ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বিহঙ্গ

মনকাড়া ছোট্ট পাখি শ্বেতাক্ষী

মনকাড়া ছোট্ট পাখি শ্বেতাক্ষী

চট্টগ্রামের হাজারিখিল এলাকায় শ্বেতাক্ষী পাখি রানা মাসুদ

 স্বপন চৌধুরী, রংপুর

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫ | ০১:০৬

ছোট্ট, সুন্দর ও মায়াবী পাখি শ্বেতাক্ষী বা বাবুনাই। সাদা চোখ পরিবারের পাখিটি চশমা পাখি বা চশমা টুনি নামেও পরিচিত। এরা ছোট ছোট দলে চারণ করে, খায় ছোট পোকামাকড়। চোখের চারদিক ঘিরে সাদা বলয় ও সামগ্রিক হলুদ বর্ণের ওপরের অংশ দ্বারা সহজে শ্বেতাক্ষীকে শনাক্ত করা যায়।

শ্বেতাক্ষী ভারতীয় উপমহাদেশের উন্মুক্ত অরণ্যে বসবাস করে। ওমান, ইরান, আফগানিস্তান, চীন, মিয়ানমারেও দেখা মেলে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাজারিখিল এলাকায় শ্বেতাক্ষী পাখির ছবি তুলেছেন কথাসাহিত্যিক ও রংপুরের শৌখিন আলোকচিত্রী রানা মাসুদ।
তিনি বলেন, হাজারিখিল এলাকায় দোয়েল, কাঠশালিক, হলদে বউ, বড় বসন্তবাউরি, তিলা ঘুঘু, লেজ নাচুনে, টুনটুনিসহ অনেক পাখির ছবি তুলেছি। কিন্তু তাদের মধ্যে শ্বেতাক্ষী সত্যিই আমার মন কেড়ে নিয়েছে! দেখতে চশমা পরা ছোট্ট সুন্দর। অনেক পাখির মধ্যে ছোট্ট ও চঞ্চল স্বভাবের পাখিটি ছিল সবচেয়ে নজরকাড়া।
শ্বেতাক্ষীর ইংরেজি নাম White Eye বা Oriental White Eye। সবচেয়ে ছোট ফুলঝুরি পাখির পরই স্থান শ্বেতাক্ষীর। মাত্র ১০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৯ গ্রাম ওজন। প্রাপ্তবয়স্ক শ্বেতাক্ষীর মাথা ও পিঠ হলুদাভ সবুজ। ডানা ও লেজ কালচে। গলা, বুকের উপরাংশ ও লেজের তলা উজ্জ্বল হলুদ। বুক ও পেট সাদা। চোখের কোনায় কালচে দাগ থাকে। চোখ বাদামি-হলুদ। ঠোঁট কালচে ও নিচের ঠোঁটের গোড়া বাদামি।
পা, পায়ের পাতা ও নখ ধূসর বাদামি। ছানাদের চোখে চশমা থাকে না। এটি আমাদের আবাসিক পাখি। পুরোপুরি বৃক্ষচারী, গাছের শাখা-পাতা-ফুলে লাফিয়ে লাফিয়ে এবং উড়ে উড়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। কখনও কখনও উল্টো হয়ে ডালে ঝুলে ফুলের মধু পান করে বা ফল খায়। কীটপতঙ্গ, রসালো পোকা, ফুলের রস, পাকা ফল, বীজ তাদের প্রিয় খাদ্য। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে এবং ফুল-ফলের পরাগায়নের মাধ্যমে প্রকৃতিকে সজীব রাখে।

অপরূপ শ্বেতাক্ষী পাখির নারী-পুরুষ দেখতে একই রকম। মূলত প্রজননের সময় এরা সুরেলা কণ্ঠে গান করে। তবে দীর্ঘ সুরে গান গাইতে পারে না। বড়জোর ৮-১০ সেকেন্ড দম আটকে রাখতে পারে। ‘সিসি... টিসি...’ শব্দে ডাকাডাকি করে। এপ্রিল থেকে জুন প্রজনন সময়। এ সময় গাছের সরু শাখায় ঘন পাতার আড়ালে সরু শিকড়, মাকড়সার জাল দিয়ে গোলাকার ঝুলন্ত বাসা তৈরি করে।
বাসা বাঁধতে শ্বেতাক্ষী তিন-চার দিন সময় নেয়। বাসা তৈরি হয়ে গেলে স্ত্রী পাখি ডিম দেয় বড়জোর দু-তিনটি, রং ফ্যাকাশে নীল। ৯ থেকে ১১ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাংলাদেশের আর কোনো পাখির ডিম এত অল্প সময়ে ফুটতে দেখা যায় না। ছানারা প্রায় ১০ দিনে উড়তে শেখে। স্বাবলম্বী হতে সময় নেয় ৩০-৩৫ দিন।
আলোকচিত্রী রানা মাসুদ বলেন, শ্বেতাক্ষী খুব চঞ্চল স্বভাবের হওয়ায় ছবি তোলা খুব কঠিন। ধৈর্য নিয়ে এদের ছবি তুলতে হয়। বলা চলে, সাধনা করে গত মে মাসে চট্টগ্রামের হাজারিখিলে শ্বেতাক্ষীর ছবি নিতে পেরেছি।

আরও পড়ুন

×